ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গাজী এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ সাজানো নাটক দাবি করে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাংশ। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এদিকে কলেজ চলাকালীন সময়ে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তারা হলেন সৈয়দ ঈসা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের জিএম ফারুক ও গোবিন্দ ঘোষ। তাদের মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছেন। তবে শিক্ষকরা বলেন, তাদের ক্লাস প্রথম দিকে ছিল। তারা ক্লাস শেষে ছুটি নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন।
মানববন্ধের কারণে দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়ে। এ সময় ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন।
এদিকে কর্মসূচিতে যোগদান করে স্থানীয় গুটুদিয়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়দেব মণ্ডল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। অন্যদিকে ভুক্তভোগী কিশোরীর মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা।
মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীর মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। এরপর আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। এছাড়া তাকে হাসপাতালের ওসিসির সামনে থেকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়— সে ব্যাপারে আমরা কতৃর্পক্ষের সঙ্গে ঢাকায় যোগাযোগ করছি।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির কো-অর্ডিনেটর ডা. সুমন রায় জানান, মেয়েটির মাইক্রো বায়োলজিক্যাল রিপোর্ট পেতে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন সময় লাগতে পারে। এছাড়া ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফলাফল পেতে এক মাস বা দুই মাস সময় লাগতে পারে।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার বলেন, গত রবিবার থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিস বন্ধ। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তার টেবিলে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পড়ে আছে। স্বাক্ষর হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে ডুমুরিয়ার এক কিশোরী উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হয়। ওই সময় তিনি বলেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গাজী এজাজ আহমেদ তার সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। শেষ পর্যন্ত বিয়ে করতে চূড়ান্তভাবে অস্বীকৃতি জানালে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে শারীরিক পরীক্ষা করাতে আসেন।
পরদিন বিকালে তিনি ছাড়পত্র নিয়ে ওসিসি থেকে বের হলে হাসপাতাল চত্বর থেকে মায়ের কাছে যাওয়ার সময় একটি মাইক্রোবাসে তাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে চেয়ারম্যানের অনুসারীদের বিরুদ্ধে। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামানকে আটক করে পুলিশে দেয় জনতা।
পরে যশোরের কেশবপুর থেকে ওই নারী থানায় ফিরে এসে বলেন, তিনি ধর্ষণের শিকার ও অপহৃত হননি। আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এরপর রাত ১২টার পরে গাজী তৌহিদুজ্জামানকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।