বাংলাদেশে শক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, গ্যাস, নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেটসহ নানা খাতে বিনিয়োগের ব্যাপারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা।
গতকাল পবিত্র কাবার সন্নিকটে মক্কা ক্লক টাওয়ারে মারওয়া রায়হান হোটেলের আল সোরফা কনফারেন্স হলে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী সভায় এই আগ্রহের কথা জানান তারা। সৌদি আরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে আয়োজিত এই সভায় অংশ নেন জেদ্দা, রিয়াদ ও মদিনা চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ, যৌথ উদ্যোগ এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সৌদি আরব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এসএবিসিসিআই)–এর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও মাক তাবাতুল আখতার-এর প্রধান নির্বাহী হাফেজ মাওলানা মুফতি আহমেদ আলীর সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বোর্ড সদস্য শেখ আব্দুল হাফিজ মক্কী। অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসএবিসিসিআই–এর আহ্বায়ক আশরাফুল হক চৌধুরী। তিনি মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উদীয়মান বিনিয়োগ পরিবেশ এবং তা থেকে দুই দেশের সম্ভাব্য লাভের দিক তুলে ধরেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের নিউইয়র্ক প্রতিনিধি ও সৌদি ব্যবসায়ী আহাম্মেদ এ ফারুকী, জেদ্দা চেম্বার বোর্ডের সদস্য আব্দুল্লাহ রাদাহ আল-হারতি, সৌদি বড় ব্যবসায়িক গ্রুপ আল ওয়ান আল মোস্তাহিদার চেয়ারম্যান শেখ ফৌজান আল হারসি, ইলসা ইন্টারগ্রেটেড কোম্পানির সিইও ও রিয়াদ চেম্বারের বোর্ড সদস্য মিস্টার শাহ জালাল, বারাকাত গ্রুপের সিইও আব্দুল আজিজ বিন আসাদ আল সুবায়ি, মারজান ফ্যাশনের প্রতিষ্ঠাতা নেসার আহমেদ, শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী এবং বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেল, জেদ্দার কাউন্সিলর সৈয়দা নাহিদা হাবিবা। মক্কার এক শীর্ষ হোটেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব আলীও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সৌদি চেম্বার প্রতিনিধিদের উদ্দেশে আশরাফুল হক চৌধুরী বলেন, দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে সৌদি আরব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলেও জানান তিনি। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশ নিতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকার বিভিন্ন দেশের জন্য আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করেছে, যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নির্বিঘ্নে বিনিয়োগ ও মুনাফা অর্জন করতে পারেন। তাঁর আশাবাদ—আগামী এক বছরে হাজার হাজার নতুন বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে পুঁজি আনবেন।
সভাপতির বক্তব্যে শেখ আব্দুল হাফিজ মক্কী জানান, তিনি ব্রিটিশ উদ্যোক্তা করাইনু কোম্পানির মাধ্যমে ভারী যানবাহনের ব্যাটারি আমদানি করতেন। কিন্তু সেই ব্যাটারির উৎস যে বাংলাদেশ, তা জানার পর তিনি সরাসরি বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। এতে মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই ব্যাটারি আমদানির সুযোগ পেয়ে তিনি খরচ কমাতে পেরেছেন।
অনুষ্ঠানটি তত্ত্বাবধান করেন এসএবিসিসিআই-এর সদস্য ও তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা, রেডিমেড গার্মেন্টস রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এস.এ. ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার শওকত আলি। রিয়াদ, জেদ্দা, মক্কা ও তায়েফ থেকে আগত শীর্ষ ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে গঠিত নতুন প্ল্যাটফর্মটি বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন বাজারের দরজা খুলে দেবে—এমনটাই মত দেন আয়োজকেরা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, কনসাল জেনারেলসহ অন্যান্য কূটনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।সৌদি আরব ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার এ ধারা ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা তৈরি করবে বলেও মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট চেম্বার প্রতিনিধিরা।