ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা ও কৃত্রিম দুর্ভিক্ষে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। খাবার, চিকিৎসা ও ত্রাণে প্রবেশে বাধার কারণে অসহায় মানুষ, বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু ও বয়স্করা অনাহারে মারা যাচ্ছেন। শীর্ষস্থানীয় গণহত্যা বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েলের এই কার্যকলাপকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
গত মঙ্গলবার এক দিনে অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও ১৩ জন প্রাণ হারান, যার মধ্যে তিন শিশুও রয়েছেন। আগস্ট মাসে এ কারণে মারা গেছেন ১৮৫ জন, এবং ২৭ সেপ্টেম্বরের পর থেকে এ ধরনের মৃতের সংখ্যা ৩৬১-এ পৌঁছেছে।ইসরায়েলের ত্রাণবাহী গাড়িকে প্রবেশ করতে না দেওয়া, খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি ত্রাণকেন্দ্রেও মানুষকে বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে। মূলত লক্ষ্য হচ্ছে গাজার মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন করা এবং উপত্যকায় সামরিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪৩ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। এছাড়া ৫৫ হাজারের বেশি অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারী চরম অপুষ্টিতে রয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ অন্তঃসত্ত্বা নারী রক্তাল্পতায় ভুগছেন। মা ও নবজাতকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা শুরু হলে এ পর্যন্ত ৬৩,৫৫৭ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা এক লাখ ৬০,৬৬০। জাতিসংঘের সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা আইপিসি গত ২২ আগস্ট জানিয়েছে, গাজায় পাঁচ লাখ ১৪ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এই সংখ্যা ছয় লাখ ৪১ হাজারে পৌঁছানোর শঙ্কা রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। ত্রাণ ও সাহায্যের প্রবেশ বাধা দেওয়া হচ্ছে। গাজার মানুষ যখন খাবার নিতে আসেন, তখন তাদেরকে লক্ষ্যবস্তু করে হত্যা করা হচ্ছে।
বিশ্বের শীর্ষ গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের সংগঠন আইএজিএস বিবিসিকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের পদক্ষেপ গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞা পূরণ করছে। সংগঠনটি ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের তালিকা তৈরি করেছে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ত্রাণকর্মী ও বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধায় হামলার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৫০ হাজার শিশুও আহত হয়েছেন।
এদিকে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রিভোট সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ঘোষণা দেবেন। একই ধরনের পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও আরও এক ডজনের বেশি পশ্চিমা দেশ। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা