গত জুনে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। বরং ওই হামলার পর নিজেদের পরমাণু কর্মসূচি আরও গোপন ও সুসংগঠিতভাবে এগিয়ে নিচ্ছে তেহরান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বানচাল করতে নতুন হামলার পরিকল্পনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের ক্যান্সার খ্যাত ইসরাইল।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত মহাসাগরে নৌ ও ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া চালিয়েছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সম্ভাব্য নতুন সামরিক আগ্রাসনের ইঙ্গিতের মধ্যেই অনুষ্ঠিত এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও প্রতিরোধ শক্তি প্রদর্শন। একই সঙ্গে নিজেদের তৈরি নতুন অস্ত্রগুলোর কার্যক্ষমতাও তুলে ধরেছে ইরান।
ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ ডেস্ট্রয়ারসহ কাদির, নাসির ও কাদের নামের জাহাজ বিধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শত্রুদের যুদ্ধজাহাজ নিমিষেই ধ্বংস করতে সক্ষম। বিশ্লেষকদের মতে, স্থল বা আকাশপথের পরিবর্তে বিশাল জলরাশির উপর মহড়া আয়োজন ইরানের সামরিক কৌশলগত বার্তারই অংশ। এর মাধ্যমে শত্রুদের কাছে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে—প্রয়োজনে ইরান যেকোনো স্থানে অভিযান চালাতে প্রস্তুত।
মহড়ার পরপরই দখলদার ইসরাইলকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দেন ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজির নাসিরজাদে। তিনি বলেন, ইরানের হাতে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নতমানের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ইসরাইল যদি নতুন হামলা চালায়, তবে সেই উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা জবাব দেবে তেহরান।
এদিকে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত মহাসাগরে এই মহড়া কেবল সামরিক শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং আরও গভীর কৌশলগত বার্তা বহন করে। বৈশ্বিক বাণিজ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার অন্যতম কেন্দ্র এই জলপথ। আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত এই সামুদ্রিক রুট বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্যের মেরুদণ্ড। সমুদ্রপথে ৮০ শতাংশেরও বেশি তেল পরিবহন হয় ভারত মহাসাগরের মাধ্যমে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইল আবার হামলা চালালে, এই জলপথেই তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে ইরান, যা বৈশ্বিক জ্বালানি বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
একই সঙ্গে, ভারত মহাসাগরে দৃঢ় উপস্থিতি ইরানকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে। এ অঞ্চলেই চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও ব্রিটেন নিজেদের সামুদ্রিক প্রভাব বিস্তারে প্রতিযোগিতা করছে। তাই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক হুমকি মোকাবেলায় ইরানের এই মহড়া ভবিষ্যতের কৌশলগত প্রস্তুতিরই ইঙ্গিত বহন করছে।