আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত ইসরাইলি বাহিনীর টানা অভিযানের মুখেও বুক চিতিয়ে লড়াই করছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা। মাতৃভূমির একটি কণাও ছাড়তে রাজি নয় তারা। গাজার অলিগলি ও ধ্বংসস্তূপের আড়ালে থেকে অতর্কিত আঘাত হেনে দখলদার বাহিনীর জন্য সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত হয়ে উঠেছে এই যোদ্ধারা।
গোপন সুরঙ্গ থেকে বেরিয়ে আকস্মিক হামলা চালিয়ে তারা আবার ধোঁয়ার মতো মিলিয়ে যায় ধ্বংসস্তূপে। এই গেরিলা কৌশল ইসরাইলি সেনাদের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে। প্রতিনিয়ত প্রতিরোধ যোদ্ধারা ধ্বংসস্তূপের মাঝেও গাইছে বিজয়ের গান। যদিও তাদের হাতে নেই ইসরাইলের মতো অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র বা আকাশযান, তবে রয়েছে মাটির প্রতি ভালোবাসা ও স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। সেই অদম্য স্পৃহাই প্রতিটি পদক্ষেপে সঞ্চার করছে শক্তি।
রাতের অন্ধকারে কিংবা দিনের আলোয় সুযোগ পেলেই প্রতিরোধ যোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়ছে ইসরাইলি সেনাদের উপর। কেড়ে নিচ্ছে একের পর এক জীবন। তাদের এই যুদ্ধ টিকে থাকার সংগ্রাম, যেখানে গাজার প্রতিটি ইঞ্চি মাটি একেকটি প্রতিরোধের দুর্গে পরিণত হয়েছে।
বিশেষত হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেড ইসরাইলি সেনাদের ঘুম হারাম করে তুলেছে। তাদের নাম শুনলেই ভয়ের স্রোত বয়ে যায় ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে। সম্প্রতি আল কাসাম যোদ্ধারা গাজায় ইসরাইলি ট্যাংক ও বুলডোজার উড়িয়ে দিয়েছে।
রোববার নিজেদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আল কাসাম জানায়, শনিবার গাজার দক্ষিণাংশের আল জাইতুন এলাকায় একটি ইসরাইলি মারকাভা ট্যাংক ও ডি-৯ সামরিক বুলডোজারে হামলা চালানো হয়। তারা নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ইয়াসিন-১০৫ রকেট চালিত গ্রেনেড এবং একটি বিস্ফোরক ব্যবহার করে এই হামলা পরিচালনা করে।
এরই মধ্যে ৬২০ দিনের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ বন্ধে শান্তি আলোচনা আলোর মুখ দেখেনি। বরং গাজা পুরোপুরি দখলে নিতে অভিযান আরও জোরদার করছে ইসরাইল। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে হামাস ও এর বিভিন্ন শাখা। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলি সেনাদের উপর হামলার সংখ্যা বাড়ছে, এবং বহু সেনা হতাহতের খবর প্রকাশ পাচ্ছে।
ইসরাইলি গণমাধ্যমেও এসব হামলার তথ্য উঠে আসছে। ইসরাইলি আর্মি রেডিও জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ জন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। পাশাপাশি, হামাস ও এর বিভিন্ন শাখার যোদ্ধারা ইসরাইলি সেনাদের আটক করে জিম্মি বানানোরও চেষ্টা চালাচ্ছে—যাতে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকারকে চাপে ফেলা যায়।
অন্যদিকে, হামাসের হামলা ও অপহরণের ঝুঁকি ঠেকাতে নিজেদের নিরাপত্তা প্রোটোকল আরও শক্ত করছে ইসরাইলি বাহিনী। আটক এড়াতে সেনারা এখন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।