মহররম মাসের দশম দিনটি আশুরা নামে পরিচিত। এই দিনটি নানা কারণে মুসলিম উম্মাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ইহুদি ও খ্রিস্টানদের কাছেও আশুরার দিনের মর্যাদা রয়েছে। মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা এই দিনে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তাই ইহুদিরা আশুরার দিনটিকে উদযাপন করে ও এই দিনে রোজা রাখে। (সহিহ মুসলিম: ১১৩০; সহিহ বুখারি: ১১২৫, ৩৯৪৩)
খ্রিস্টানরাও এই দিনকে মর্যাদার চোখে দেখে। তারা আশুরার দিনকে ঈসা (আ.)-এর জন্মদিন মনে করে। মুসতাদরাকে হাকেমে এসেছে : জাবির (রা.) জায়দ আম্মি থেকে বর্ণনা করেন, ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম আশুরার দিনে জন্মগ্রহণ করেন।’ যদিও এ বর্ণনার সনদ দুর্বল বলেছেন আল্লামা জাহাবি (রহ.)। (হাকেম: ৪১৫৫)
জাহেলি যুগের আরবরাও এই দিনকে বিশেষ মর্যাদা দিত। এই দিনে তারা কাবার গিলাফ পরিবর্তন করত। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে মুসলিমদের ওপর আশুরার রোজা ওয়াজিব ছিল। কিন্তু রমজানে রোজা ফরজ হওয়ার পর এদিন রোজা রাখা মোস্তাহাব হয়ে গেছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার দিনে রোজা রাখত। সেদিন ছিল কাবাকে গিলাফ পরিধান করার দিন।’ যখন আল্লাহ রমজানের রোজা ফরজ করলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, যারা রোজা রাখতে চায়, তারা রোজা রাখবে, আর যারা ছেড়ে দিতে চায়, তারা যেন ছেড়ে দেয়। (বুখারি: ১৫৯২)
কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনাও আশুরার দিনেই সংঘটিত হয়েছিল। এজন্য আশুরার গুরুত্ব মুসলিম উম্মাহর কাছে আরও বেড়ে গেছে। তবে, হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের কারণে রাসুল (স.) আশুরাকে মূল্যায়ন করেননি এবং এ কারণেই দিনে রোজা রাখার কথা বলেননি। কারণ হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা ঘটেছে ৬১ হিজরির দিকে নবীজির ইন্তেকালের প্রায় ৫০ বছর পরে। সুতরাং আশুরার প্রেক্ষাপটের সঙ্গে হুসাইন (রা.)-এর বিদায়ের ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ, এ কারণে পরবর্তী উম্মাহর কাছে আশুরার গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
অনেকে আশুরা দিবসের গুরুত্ব আলোচনা করতে গিয়ে বলে থাকেন যে, ‘হাদিস শরিফে এসেছে, এই দিনে কেয়ামত সংগঠিত হবে।’ এই কথাটা সঠিক নয়। যে বর্ণনায় আশুরার দিন কেয়ামত হওয়ার কথা এসেছে তা হাদিস বিশারদদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভিত্তিহীন এবং জাল।
আল্লামা আবুল ফরজ ইবনুল জাওযি ওই বর্ণনা সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, ‘এটা নিঃসন্দেহে মওজু বর্ণনা …।’ হাফেজ সুয়ুতি রাহ. ও আল্লামা ইবনুল আররাক (রহ)-ও তাঁর ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। (কিতাবুল মওজুআত: ২/২০২; আল লাআলিল মাসনুআ: ২/১০৯; তানজিহুশ শরিআতিল মরফুআ: ২/১৪৯)
তবে জুমআর দিন কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার কথা সহিহ হাদিসে এসেছে। কিন্তু ওই জুমার দিনটি আশুরার দিনেই হবে—এমন কথা হাদিসে নেই। (দ্র: তিরমিজি: ২/৩৬২; আবু দাউদ: ১/৬৩৪; সুনানে নাসায়ি: ৩/১১৩-১১৪)