হজরত সুলাইমান (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা একইসঙ্গে নবুয়ত, কর্তৃত্ব, প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দাউদ (আ.)-এর সন্তান। সারাবিশ্বের শাসক ছিলেন সোলাইমান (আ.)। তাঁকে আল্লাহ তাআলা জ্বিন, প্রাণী ও পোকামাকড়ের কথা বোঝার ক্ষমতা দান করেছিলেন। এছাড়াও বায়ু প্রবাহ তাঁর অনুগত হওয়া, তামাকে তরল ধাতুতে পরিণত করার মতো ক্ষমতাও ছিল তাঁর।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সোলাইমান দাউদের স্থলাভিষিক্ত হলো এবং বলল, হে লোক সকল, আমাদেরকে পাখির ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাদেরকে সবকিছু দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এটি একটি সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব। (সুরা নামল: ১৬) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি সুলাইমানের অধীন করে দিয়েছিলাম প্রবল বায়ুকে। যা তার আদেশে প্রবাহিত হতো ওই দেশের দিকে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮১)
পবিত্র কোরআনে তাঁর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা প্রসঙ্গে নানা ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। একদিন সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি কোথাও যাচ্ছিলেন। তখন এক পিঁপড়া সর্দার সমস্ত পিঁপড়াকে ডেকে বলে, হে পিপিলিকার দল শোনো ! সোলাইমান (আ.) একটু পর এদিক দিয়ে তার বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে যাবেন। সুতরাং তোমরা কিছুক্ষণের জন্য সকলেই গর্তে প্রবেশ করো। যাতে তোমরা তাদের পদতলে পিষ্ট না হও এবং কোনো ক্ষতির সম্মুখীন না হও।
বিষয়টি আল্লাহ তাআলা কোরআনে তুলে ধরেছেন এভাবে— ‘তারপর সোলাইমানের সম্মুখে তার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জ্বিন, মানুষ ও পাখিদেরকে। তারপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যুহ্যে বিভক্ত করা হলো, এরপর যখন তারা একটি পিপীলিকা অধ্যুষিত এলাকায় উপনীত হলো, তখন এক পিপীলিকা বলল, ‘হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সোলাইমান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে। (সুরা নামল: ১৭-১৮)
তার কথা শুনে সোলাইমান মুচকি হাসলেন এবং বললেন, ‘হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমাকে ক্ষমতা দাও, যেন আমি তোমার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতামাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎ কাজসমূহ করতে পারি এবং তুমি আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো।’ (সুরা নামল: ১৯)
মানব চেতনায় পরোপকারের বীজ বপন করতে এক পিঁপড়া অন্য পিঁপড়াদের উপকারের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। সেই সঙ্গে আল্লাহ তাআলা পিঁপড়ার নামে একটি সুরার নামকরণও করলেন ‘সুরাতুন নামল’। আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী-রাসুলের জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।