ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি স্পষ্ট করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আগামী ১ আগস্টের মধ্যে কোনো চুক্তি না হলে ভারতের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারত আমাদের ভালো বন্ধু, তবে ওরা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপকারী দেশগুলোর একটি। এটা আর চলবে না।’তিনি আরও জানান, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি এখনও সম্পন্ন হয়নি, আর এ অবস্থায় দেশটি আরও বেশি শুল্কের মুখোমুখি হতে পারে।
এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি না হলে ভারত তার রপ্তানিপণ্যের ওপর ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক মেনে নিতে প্রস্তুত। তবে চুক্তি ছাড়া নতুন কোনো ছাড় ভারত আপাতত দিতে চাইছে না।ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল আগস্টে দিল্লি সফরে আসবে এবং তখন বৃহত্তর বাণিজ্য আলোচনা শুরু হবে। আশা করা হচ্ছে, অক্টোবরের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন হতে পারে।
একজন ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘আলোচনার অগ্রগতি ভালোই হচ্ছে। তবে যদি যুক্তরাষ্ট্র শেষ মুহূর্তে শুল্ক আরোপ করে, সেটিকে আমরা অস্থায়ী পদক্ষেপ হিসেবেই ধরছি, কারণ এর আগে পাঁচ দফা আলোচনা হয়েছে।’
তবে এসব আলোচনার মাঝেই ট্রাম্প আবারও দাবি করেছেন, তিনি আগেই ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষে যুদ্ধবিরতি করাতে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ‘আমি মোদিকে বলেছিলাম এবং সেটা কাজ করেছিল’ বলেন ট্রাম্প। যদিও ভারত সরকার আগে থেকেই ট্রাম্পের এই দাবি অস্বীকার করে আসছে।বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে ট্রাম্পের প্রকাশ্য মন্তব্য বাণিজ্যচুক্তির পরিবেশকে কিছুটা বিঘ্নিত করেছে।
এরইমধ্যে ট্রাম্প জানিয়েছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করতে রাজি নয়, তাদের পণ্যের ওপর ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হবে। বর্তমানে বেশিরভাগ দেশের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপিত আছে, যা এপ্রিল মাসে কার্যকর হয়। তবে শিগগিরই প্রায় ২০০টি দেশের কাছে ‘বিশ্ব শুল্ক হার’ বিষয়ক বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হবে।যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সিএনবিসিকে বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে আলোচনা দ্রুত নয়, বরং ভালো চুক্তি করার লক্ষ্যেই এগোচ্ছে। ভারত কিছু খাত উন্মুক্ত করতে আগ্রহ দেখালেও দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিজেদের স্বার্থ রক্ষার নীতিতে চলেছে।’
সম্প্রতি রয়টার্সকে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ হয়েছে। তিনি জানান, ভারত নানা পণ্যে শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দিয়েছে এবং অশুল্ক বাধা কমাতেও কাজ করছে।
তবে কৃষি ও দুগ্ধ খাত এখনো ‘অস্পর্শযোগ্য’—ভারত জেনেটিকালি পরিবর্তিত সয়াবিন বা ভুট্টা আমদানির অনুমতি দিতে রাজি নয়, এমনকি মার্কিন দুগ্ধজাত পণ্য আমদানির দিকেও আগ্রহ দেখায়নি।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক পণ্যবাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভারতের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।ভারতের আরেক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক শুল্ক হুমকি, বিশেষ করে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোকে কেন্দ্র করে, ভারতের কৌশলগত চিন্তাভাবনায় বড় প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যে আছে ডি-ডলারাইজেশন ও রাশিয়ান তেল ক্রয়ের মতো ইস্যুগুলো। সূত্র: রয়টার্স