ফেরেশতারা পবিত্র ও নিষ্পাপ মাখলুক। তারা সর্বদা আল্লাহর তাসবিহ ও ইবাদতে মগ্ন থাকেন। তাদের দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কিছু মানুষের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করলেও কোনো কোনো হতভাগার কপালে জুটে ফেরেশতাদের অভিশাপ। আসুন জেনে নিই সেসব দুর্ভাগা কারা, যাদেরকে ফেরেশতারা অভিশাপ দেন।
১, ইলম গোপনকারী
যারা ইলম (জ্ঞান) গোপন করে বা বিকৃত করে, তাদের জন্য আছে কঠিন হুঁশিয়ারি ও ফেরেশতাদের অভিশাপ। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আমার নাজিলকৃত উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী ও হেদায়াত গোপন করে—যদিও আমি কিতাবে তা মানুষের জন্য সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছি, তাদের প্রতি আল্লাহ লানত বর্ষণ করেন এবং অন্য লানতকারীরাও (ফেরেশতারা) লানত করে।’ (সুরা বাকারা: ১৫৯)
২. অবাধ্য স্ত্রী
স্বামী স্ত্রী একে অন্যের পোশাকস্বরূপ। পারস্পরিক ভালোবাসা আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামত। কোনো নারী যদি তার স্বামীর ওপর রাগ করে শয্যা ত্যাগ করে, তাঁকে আহ্বান করা সত্ত্বেও সাড়া না দেয়, তার জন্য অভিশাপ। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, স্বামী যখন স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে এবং সে না আসে তার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে রাত্রি যাপন করে, সে স্ত্রীর প্রতি ফেরেশতারা ভোর হওয়া পর্যন্ত লানত করতে থাকে। (মুসলিম: ৩৪৩৩)
৩. কাফির, মুরতাদ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অস্বীকার করে এবং এর ওপর মৃত্যুবরণ করে, তাদের জন্য রয়েছে অভিশাপ। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা কুফরি করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সব মানুষের লানত।’ (সুরা বাকারা: ১৬১)
৪. যারা সাহাবাদের গালি দেয়
সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন আল্লাহর রাসুলের বিশ্বস্ত সহযোগী। তাঁদের ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ‘আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।’ (সুরা মুজাদালাহ: ২২) নবীজির প্রিয় সাহাবিদের যারা গালি দেয়ে তাদের অভিশাপ দেন আল্লাহ ও ফেরেশতারা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যারা আমার সাহাবিকে গালি দেবে তাদের ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সব মানুষের পক্ষ থেকে অভিশাপ।’ (তাবারানি, হাদিস : ১২৭০৯)
৫. ইচ্ছাকৃত বা খেলার ছলে অস্ত্র তাককারী
কোনো মুসলিমের প্রতি ইচ্ছাকৃত বা খেলার ছলে অস্ত্র তাক করা নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি (লৌহ নির্মিত) মারণাস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত করে সে তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত ফেরেশতারা তাকে অভিসম্পাত করতে থাকে। যদিও সে তার আপন ভাই হয়। (মুসলিম: ৬৫৬০)
৬. ওয়াদা ভঙ্গকারী
ওয়াদা ভঙ্গ করা মুমিনের কাজ নয়। ওয়াদা ভঙ্গকারীর ওপর ফেরেশতারা অভিশাপ করেন। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মুসলমান কর্তৃক নিরাপত্তাদানের অধিকার সবার ক্ষেত্রে সমান। তাই যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দেওয়া নিরাপত্তাকে লঙ্ঘন করবে, তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত এবং সব ফেরেশতা ও মানুষের। আর কবুল করা হবে না তার কোনো নফল কিংবা ফরজ ইবাদত। (বুখারি: ১৮৭০)
৭. নিজের বাবা ছাড়া অন্য কাউকে বাবা বলা
আপন পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা বলা নিষিদ্ধ। ইচ্ছাকৃত এমন করলে তার জন্য জান্নাত হারাম। (বুখারি: ৬৭৬৬) তাদের জন্য রয়েছে অভিশাপ। রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পিতা বলে দাবি করবে অথবা যে ক্রীতদাস তার মনিবকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মাওলা বানায়, তার ওপর আল্লাহর লানত, ফেরেশতা ও সমগ্র মানব জাতির লানত বর্ষিত হবে। কেয়ামত দিবসে আল্লাহ তার কোনো ফরজ কিংবা নফল (ইবাদত) কবুল করবেন না। (মুসলিম: ৩৬৮৬)
৮. হত্যার ন্যায়বিচারে বাধাপ্রদানকারী
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অথবা পাথর, কোড়া অথবা লাঠি ছোড়াছুড়ির মাঝে পড়ে নিহত হয়, তার দিয়াত (রক্তপণ) হবে ভুলে হত্যার দিয়াতের মতো, আর যদি ইচ্ছাকৃত হত্যা হয়, তবে তাতে কিসাস (মৃত্যুদণ্ড) ওয়াজিব হবে। আর যদি কেউ এর মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তবে তার ওপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের এবং সব মানুষের লানত। তার ফরজ বা নফল কিছুই কবুল হবে না। (নাসায়ি: ৪৭৮৯)