সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ইকোনমিস্ট’ সাময়িকীতে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি পর্যালোচনা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধটি জানিয়েছে, দেশের নানা সমস্যা সত্ত্বেও কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। বাংলাদেশের নৈতিকতাসম্পন্ন নেতা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দেশের পুনর্জাগরণ চলছে।
ম্যাগাজিনটি উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি ব্যর্থ হতে পারে না। দেশের অর্থনীতি কঠিন সময় পার করে দ্রুত উন্নতি লাভ করছে এবং সুশীল সমাজ দৃঢ় রয়েছে। নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, ঢাকার রাজপথে গণঅভ্যুত্থানের পর নোবেল শান্তি বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছে। অনেক বাংলাদেশী এটিকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে দেখছেন।
ম্যাগাজিনটির মতে, বাংলাদেশের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করতে হবে। পুরনো স্বৈরাচারী ব্যবস্থা সরানোর পর রাজনৈতিক সংস্কার, দুর্বল প্রতিষ্ঠান এবং গোষ্ঠীতন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ড. ইউনূসের লক্ষ্য হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। তবে, প্রথমে তাকে নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ ও আদালতগুলোকে পরিস্কার করতে হবে। নিবন্ধটি মনে করিয়ে দিয়েছে যে, ড. ইউনূসের সফলতা বা ব্যর্থতা বাংলাদেশের ১৭৩ মিলিয়ন মানুষের জীবনযাত্রা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রভাব ফেলবে।
নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ড. ইউনূস একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির সম্মুখীন। তার প্রাথমিক কাজ হবে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং প্রতিশোধমূলক সহিংসতার প্রভাব কমানো, যা অতীতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। এর মানে হলো, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এবং আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি টেকনোক্র্যাট-নির্দেশিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা।
ইউনূসকে দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে নিবন্ধটি বলেছে যে, অনির্বাচিত কেয়ারটেকার সরকার দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এটি বৈধতা হারাতে পারে অথবা সামরিক সমর্থকরা দীর্ঘকাল ক্ষমতা ধরে রাখতে চেষ্টা করতে পারে।
ম্যাগাজিনটি সতর্ক করেছে যে, দেশটি পাকিস্তানের মতো ইসলামপন্থীদের প্রতি ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। আর্থিক সমস্যার কারণে বাংলাদেশ চীনের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে, যা ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে এবং গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলার জন্য সরকারকে বিদেশী তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করতে হবে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। ড. ইউনূসকে তরুণ সমাজ এবং ক্রমবর্ধমান শহুরে জনসংখ্যার আকাঙ্ক্ষার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক সংস্কারে নতুন ধারণার প্রতি উন্মুক্ত হতে হবে।
ম্যাগাজিনটি ভারতকে অভিযোগ করেছে যে, তারা কর্তৃত্ববাদী শাসনের সহায়তা করেছে। একটি স্থিতিশীল প্রতিবেশী দেশ গড়তে হলে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক সংস্কার করতে হবে এবং আর্থিক সহায়তা চাইতে হবে।