জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান অভিযোগ করেছেন যে, শেখ হাসিনার সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের জন্য ‘গণহত্যা’ পরিচালনা করেছে। তার মতে, এই গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের ক্ষমা করার অধিকার কারও নেই।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শফিকুর রহমান এই মন্তব্য করেন। গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির দেশে ‘হিংসার ও প্রতিশোধের রাজনীতির’ অবসান চেয়ে বলেছিলেন যে, তাদের দলের ওপর যে সমস্ত আক্রমণ হয়েছে, তা তারা আল্লাহর ওয়াস্তে ক্ষমা করে দিয়েছে। মজলিসে শুরার সভায় তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে জামায়াতের আমির বিগত আন্দোলনের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এই গণহত্যা ক্ষমা করার অধিকার কারও নেই।
সাড়ে ১৫ বছর ধরে আমাদের বিরুদ্ধে বৈরিতা চলেছে, আমাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে, অফিসগুলোতে তালা ঝোলানো হয়েছে, আমাদের স্বাভাবিকভাবে চলতে দেওয়া হয়নি এবং নানা প্রকারে নির্যাতন করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত, সরকার আমাদের নিষিদ্ধ করে তাদের ক্ষোভ প্রশমিত করেছে। আমরা প্রতিশোধের পরিকল্পনা করি না।’ শফিকুর রহমান বলেন, ‘প্রতিশোধ না নেওয়া মানে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়া। তবে, নির্দিষ্ট অপরাধীকে আইন অনুযায়ী বিচার করতে হবে এবং তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।’
শফিকুর রহমান ছাত্র-জনতার আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করার অভিযোগ তুলে বলেন, সরকার গদি টিকিয়ে রাখতে গিয়ে শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে। তিনি এই ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার অভিযোগ, শুধুমাত্র স্থলভাগে নয়, আকাশ থেকেও গুলি চালানো হয়েছে। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়ে নিহতদের লাশ গুম করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিওর উদাহরণ হিসেবে আশুলিয়ায় ভ্যানভর্তি মৃতদেহের কথা উল্লেখ করেছেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ‘সেখানে ট্রাকের ওপর লাশের স্তূপ ছিল এবং পরবর্তীতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা কী ধরনের সভ্যতায় বাস করছি? আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাব, এই গণহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচার করতে হবে।’ তিনি ধনী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ তুলেছেন এবং তাদের বিচার দাবি করেছেন। শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশের কিছু ধনী ব্যক্তি জনগণের অর্থ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছেন। এই অর্থ ১৮ কোটি মানুষের। তাদের আইনের আওতায় এনে এই অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে এবং তাদের ক্ষমা করা উচিত নয়।’ তিনি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা তথ্য ও সাজানো আদালতের রায়ের’ অভিযোগ করেছেন এবং প্রয়াত ১১ জন নেতাকে স্মরণ করেছেন।
দীর্ঘ বক্তব্যে শফিকুর রহমান সাড়ে ১৫ বছরে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গুম, হত্যা, নির্যাতন, গ্রেপ্তার এবং মামলা করার বিষয় তুলে ধরেন। তার মতে, বিরোধী দল বিএনপি এবং বহু ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে একই ধরনের তাণ্ডব চালানো হয়েছে, যদিও জামায়াতের বিরুদ্ধে এই তাণ্ডবের ধরন ও গভীরতা ছিল ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘শত শত ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত পরিবর্তন ব্যর্থ হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্যদের সরাসরি উপস্থিতিতে এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা সাড়ে ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়।