অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, স্বৈরাচারী শাসনকালে যে পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে, তা দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ছাত্র আন্দোলনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে তিনি এক বার্তায় এই তথ্য দেন।
তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই এবং আগস্ট মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মানের একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা খুনিদের প্রত্যর্পণ এবং স্বৈরাচারী শাসনের সময় পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এজন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।”
ড. ইউনূস আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র এক মাসের মধ্যে বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়েছে। জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং তারা ইতোমধ্যে তাদের কাজ শুরু করেছে।
তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “তোমরা তোমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ নিয়েছিলে। বিপ্লবের সময় তোমরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে উদ্বিগ্ন রাত কাটিয়েছো। বিপ্লব শেষে, দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয় রক্ষার জন্য কাজ করেছে। এখন সময় এসেছে পড়াশোনায় ফিরে যাওয়ার। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে। আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্ম দরকার, তাই তোমরা ক্লাসে ফিরে যাও।”
বিপ্লবের সময় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হাজার হাজার মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানান, হাসিনার দুর্বৃত্তরা রাবার বুলেট চালিয়ে অনেক তরুণ শিক্ষার্থীর দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করেছে। আমরা তাদের চোখের আলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ চলছে, এবং বর্তমানে দূরবর্তী এলাকা থেকে সংগ্রহ করা লাশের তথ্যও যুক্ত করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সম্পন্ন শত শত আহত ব্যক্তির জন্য এবং শহীদদের পরিবারের সহায়তার জন্য একটি ফাউন্ডেশন গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যারা নতুন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের স্মৃতিকে আমরা চিরকাল শ্রদ্ধা জানাবো।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি বলপূর্বক গুমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সনদে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এতে করে স্বৈরাচারী শাসনের ‘গুম সংস্কৃতি’ সমাপ্তির জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও, ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরের গুমের ঘটনাগুলোর তদন্তে একটি কমিশন গঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, আয়না ঘরগুলো বন্ধ করা হয়েছে এবং শিগগিরই গুমের শিকার ব্যক্তিদের কষ্ট সম্পর্কে জানা যাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে, গত মাসের শেষের দিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি সরকারের নেয়া গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উদ্যোগের প্রতিবেদন তুলে ধরেন। রাজনৈতিক দল, সম্পাদক, ব্যবসায়ী নেতা, সুশীল সমাজের নেতারা এবং কূটনীতিকদের সঙ্গে ক্রমাগত বৈঠক করে তাদের সমর্থন অর্জন করা হয়েছে। বিদেশি বন্ধুদের সহায়তা এবং প্রবাসীদের উৎসাহও উল্লেখযোগ্য বলে তিনি জানান।
তিনি শহীদদের পরিবার এবং আহত ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং তাদের সঙ্গে সাক্ষাত হবে। তিনি আশ্বাস দেন যে শহীদদের স্বপ্নের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে না এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য একতা ও সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রফেসর ইউনূস বলেন, শহীদদের আত্মত্যাগ এবং আহতদের কষ্টকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না এবং তারা যে সুযোগ সৃষ্টি করেছেন তা হাতছাড়া করা হবে না।