বহুল আলোচিত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কারকাজ দেখতে গেলেন ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন। মাঠে ঢুকে হাঁটলেন। দেখলেন কোথায় কী হচ্ছে, ফুটবল মাঠ দেখলেন, মাঠে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা, প্রেসবক্স, মাঠের সঙ্গে লেগে থাকা অ্যাথলেটিক ট্র্যাকসহ নানা সমস্যা দেখলেন, শুনলেন সবার কথা। দেখে রীতিমতো বিরক্ত। সবই ভুলে ভরা। সংস্কার করতে গিয়ে নানা ভুলে দেশের ফুটবল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলত পারছে না। এ বছর ৩১ ডিসেম্বরের আগে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম প্রস্তুত করা যাবে না, সেটা আরও একবার বলতে বাধ্য হলেন ক্রীড়ামন্ত্রী।
প্রেসবক্স দেখে ক্রীড়ামন্ত্রী পাপন হতবাক, এ কেমন প্রেসবক্স! খেলা দেখতে বসলে পিলার চোখের বাধা হবে। পাপন বললেন, ‘প্রেসবক্স দেখে আমিও অবাক হয়েছি। এত পিলার কেন!’ ভুল সংশোধন করতে হলে বর্তমান বক্স ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। এখন আর সেই পরিস্থিতিও নেই। শেষ ধাপের কাজ বাকি। মাঠে পানি দেওয়ার মেশিন নেই। স্প্রিংলার বসিয়েছে, সেটা এমন এক জায়গায় বসানো হয়েছে, যেখানে খেলোয়াড়েরা ঝুঁকিতে রয়েছেন। কেউ ছিটকে পড়লে মারাত্মক আঘাত পাবেন। এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে। কেন এটা স্থাপন করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে মন্ত্রণালয় থেকে নানা উত্তর দেওয়া হয়। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানও কথা বলেছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বাফুফের দোষ দিচ্ছিল।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার ও জাবের বিন আনসারি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তারা এই স্প্রিংলার বসাতে বলেননি। ফিফার নিয়ম অনুসারে কী ধরনের ওয়াটারিং সিস্টেম স্থাপন করতে বলা হয়েছিল, সেই কাগজপত্র খুলে দেখান তারা। স্থাপিত বর্তমান স্প্রিংলার সঠিক ছিল, তার পক্ষে ক্রীড়ামন্ত্রীকে নানা খোঁড়া যুক্তি দেওয়া হচ্ছিল, সেটা বুঝতে পেরেছেন বাফুফের লোকজন কথা বলার পর। মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ ছিলেন। তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে সমাধানের চেষ্টার কথা বলেন। বাফুফে একটা গোডাউন চেয়েছিল, তারা খেলার মালামাল স্টোর করবে। কিন্তু তার কোনো ব্যবস্থা করেনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। মাঠের সাইডে অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকের বর্ডার লাইন এসে ঠেকেছে। এটাও খেলোয়াড়দের জন্য বিপজ্জনক বলে মন্ত্রীকে জানিয়েছে বাফুফে। সেটি ঢেকে দেওয়ার অনুরোধ করেছে বাফুফে। কথা উঠেছে ড্রেসিং রুম নিয়েও।
মন্ত্রী দেখলেন, শুনলেন, সবই ভুলে ভরা। বুঝতে পারছেন, সংস্কারকাজের কারণে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এখন যে অবস্থায় রয়েছে, সেখান থেকে নতুন কিছু করা যাবে না, সেটা অনুমান করছেন ক্রীড়ামন্ত্রী। তার পরও তিনি আরও কীভাবে কী করা যায়, তার চেষ্টা করবেন বলে পরিদর্শন শেষে বললেন পাপন। একটা কমিটি গঠন করবেন, যেখানে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাফুফের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি রাখা হবে। তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য জানতে চাইবেন ক্রীড়ামন্ত্রী। ঘণ্টা দেড়েক বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী। এ সময় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও সমস্যা নিয়ে কথা বলেন তিনি। সংবাদমাধ্যম নানা সমস্যার কথা ধারাবাহিকভাবে বলতে থাকে। খানিকটা মেজাজ হারালেও মন্ত্রী যেন সমস্যার কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত। তার চোখেমুখে সেই ছাপ ছিল স্পষ্ট।