বিএনপি কালো পতাকার নামে আবারো সন্ত্রাস ও সহিংসতার জানান দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে না এসে বিএনপি যে ভুল করেছে তার জন্য বিএনপিকেই পস্তাতে হবে। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার শক্তি কারও নেই। তিনি বলেন, সংবিধান এবং জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী মেনে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। কারও অগণতান্ত্রিক আহ্বানে সাড়া না দিয়ে জনগণ বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক বিষয়কে রাজপথেই মোকাবিলা করবে। এক বিন্দু ছাড় দেবে না। তিনি জানান, বিএনপি’র হুমকি ধামকিতে কারও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। এগুলো অসাড় ও ফাঁকা বুলির মতো চুপসে গেছে।
‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কথায় কথায় কাউকে (ব্যবসায়ী) ধমক দিলে সমস্যার সমাধান হবে না’ মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা এর জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে আমাদের পজিটিভ অ্যাকশনে যেতে হবে। ব্যবসায়ীরা কথা রাখবেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা কথা রাখবে, মিষ্টি কথায় তো চিড়ে ভিজে না। কথা যেভাবে বলতে হয় সেভাবেই বলতে হবে আমাদের। যে অ্যাকশনের দরকার সে অ্যাকশন নিতে হবে। শুধু হুমকি-ধমকি দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। এখানে অ্যাকশন নিতে হবে, কৌশল অবলম্বন করতে হবে। কারণ, আমাদের দেশের যে বাস্তবতা, সবকিছু ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করা যায় না। কিছু কিছু কৌশলেও যেতে হবে এবং সেটা উপলব্ধি করতে হবে। সরকারের কাছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে প্রধান চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আমাদের প্রায়োরিটি হচ্ছে দ্রব্যমূল্য।
বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টা চ্যালেঞ্জ। সংসদে যারা, তারা জনগণের প্রতিনিধি। এ সমস্যাগুলো এখন জনগণের নিত্যদিনের সমস্যা, কাজেই প্রথম চ্যালেঞ্জ এখন এটাই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, একেকবার একেকটা নিয়ে বিএনপি অপপ্রচার করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আজকে দেশের কারাগারগুলোতে তাদের সব মিলিয়ে ১০ হাজারের মতো বন্দি আছে। অথচ তারা আজকে জাতিসংঘ ও মার্কিন কংগ্রেসম্যানের কাছে অপপ্রচার করেছে। মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে তাদের দিয়ে বলাচ্ছে, বাংলাদেশে বিএনপি’র ২৫ হাজার নেতাকর্মী জেলে আছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে। মার্কিন নির্বাচন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমেরিকার নির্বাচন হচ্ছে দ্বিদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, এটা তাদের জন্মগতই। একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট হয়েছে, এটার কোনো দাম সেখানকার জনগণের কাছে নেই। সেখানে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানরা আছে। এবং তাদের মধ্যে মামলা মোকদ্দমা রয়েছে।
ডনাল্ড ট্রাম্প এখন জনপ্রিয়তায় সবচেয়ে এগিয়ে। তার বিরুদ্ধে ৯১টা মামলা রয়েছে। তিনি প্রতিনিয়ত মামলা ফেস করছেন। বাইডেন বলেছেন, আমেরিকার গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য পুনর্বার ইলেকশনে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্র রক্ষা করবো। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে আমরা কী কূটনীতি করবো, আমরা আমাদের নিয়ে আছি।
স্থানীয় নির্বাচন থেকে দলীয় প্রতীক সরিয়ে দেয়া এটা কি দলীয় কোন্দল নিরসনের জন্য, না কি বিএনপি’র যারা নির্বাচনে আসতে পারেনি, তাদের সুযোগ করে দেয়ার জন্য, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যদি বলি কোন্দল নিরসনের জন্য আমাদের কৌশল নিতে হয়েছে, ইলেকশনে আমরা কৌশল নিয়েছি। স্বতন্ত্রদের ইলেকশন করতে দিয়েছি। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিল তারা নির্বাচন করেছে। সে কৌশলের তো বিজয় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই নতুন চমকের বিজয় তো হয়েছে।
অনেকে বলেছেন লোকজন কেন্দ্রে আসবে না জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কতো ভোটার অংশ নিয়েছে এটা তো এখন পরিষ্কার। এখানে রাখঢাক করার তো কিছু নেই। এটা আমাদের একটা কৌশল। আমরা এই কৌশলটা নিয়েছি আমাদের দলের ভালোর জন্য এবং কিছুটা জনদাবির মুখে। আমাদের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকেও এই দাবিটা এসেছে উপজেলা নির্বাচনে প্রতীক না দেয়ার জন্য।
আমাদের ওয়ার্কিং কমিটিরও অনেকে একমত পোষণ করেছেন। সে মোতাবেক আমাদের নেত্রী তাদের দাবি পূরণ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের বেশির ভাগ সীমান্ত ভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এদিকে মিয়ানমারের কিছু অংশ, বাকিটা ভারত দ্বারা বেষ্টিত। ভারত আমাদের চেয়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তিসহ বহু বিষয়ে এগিয়ে। একটি শক্তিধর দেশ। এখন বিশ্বে ভারতের যে পজিশন সেটা প্রায় পরাশক্তির পর্যায়ে। ভারতের সঙ্গে ঝগড়া করে আমাদের কোনো লাভ নেই। তাদেরও এখানে ইন্টারেস্ট আছে, আমাদেরও আছে। ক্রস বর্ডার টেরোরিজম নিয়ে উদ্বেগ তাদের আছে, আমাদেরও আছে।
ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা প্রমুখ।