সড়কে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। নতুন নতুন আরো প্রকল্প নিশ্চয়ই আসবে। কিন্তু এসবের প্রকৃত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুও কমছে না।
মৃত্যু না কমার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে, কেউ কথা রাখছে না। কারো কোনো ‘কমিটমেন্ট’ নেই। সরকার, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বাস মালিক ও শ্রমিক পক্ষ। মোটকথায় সড়ক ও পরিবহন খাতের কেউ কেউ কথা রাখেনি বলেই সড়কে মৃত্যু কমছে না।
যত দিন পর্যন্ত সংশ্লিষ্টরা নিজেদের দায় রক্ষা না করবে, তত দিন পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু কমানো সম্ভব হবে না। দেখুন, আমার মনে হয় কি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সড়ক যারা তৈরি করছে, যানবাহন নিয়ন্ত্রণে যারা কাজ করছে এবং সড়কের যানবাহন যারা অনুমোদন দিচ্ছে, প্রতিটি সংস্থার মধ্যে কমিটমেন্টের ঘাটতি আছে। কমিটমেন্ট নেই বলেই আমরা সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পারছি না। আমাদের প্রকল্প আসক্তি কমানো দরকার।
যেসব কাজে সড়ক ব্যবহারকারীদের মানসিক পরিবর্তন সম্ভব, সেসব কাজে দরদ দেওয়া দরকার। যেটা আমরা করছি না। আমরা অপরিকল্পিত প্রকল্প জ্বরে ভুগছি। সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে দুই থেকে চার লেন করা হচ্ছে। বড় বড় রাস্তা করার পাশাপাশি সড়ককে চকচকে করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কিন্তু সড়কের ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। যেমন- যানবাহনের নিয়মিত ফিটনেস, রুট পারমিট, চালকের প্রশিক্ষণসহ এজাতীয় বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ততটা আগ্রহ নেই, সড়কে বানাতে যতটা আগ্রহ আছে। সংগত কারণেই দেখছি, সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে যারা কাজ করে, তাদের সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব আছে।
গত বছরের শেষ দিকে প্রায় দুই মাস বিভিন্ন মেয়াদে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নাশকতার আশঙ্কার কারণে দূরপাল্লার যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলেনি। তবু সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু কমেনি। এটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। এই মৃত্যু কমাতে হলে এখন আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি। পাশাপাশি কঠোর জবাবদিহি জরুরি। যার যে দায়িত্ব, সেটা সঠিকভাবে পালন হচ্ছে না বলেই আমি মনে করি।
আমরা দেখেছি, দুর্ঘটনা কমাতে বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) ডোপ টেস্টের উদ্যোগ নিয়েছে। আবার আবেদনের ২০ দিনের মধ্যে বাসায় বাসায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পৌঁছে যাবে। এমন আরো বেশ কিছু উদ্যোগ আছে। কিন্তু আমার কথা হলো, এই উদ্যোগগুলো কেন হোঁচট খেল, কেন মুখ থুবড়ে পড়ল, এর কি কোনো ময়নাতদন্ত হয়েছে? সঠিক তদন্ত করে উদ্যোগ সফল না হওয়ার দুর্বলতা খুঁজে বের করতে না পারলে কোনো উদ্যোগই তো সফল হবে না। সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব পালনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক ও সাবেক পরিচালক, দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বুয়েট)