শীতের মৌসুম শুরু হয়েছে। কয়দিন পর থেকেই শীতের প্রকোপ বাড়ার কথা। এমন মৌসুমে বিভিন্ন আমলের পাশাপাশি বিশেষ এক আমল হলো- বস্ত্রহীনদের বস্ত্রদান করা। এর অনেক বড় ফজিলত রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ঈমানদার কোনো ক্ষুধার্ত ঈমানদার ব্যক্তিকে খাদ্য দান করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে মুমিন কোনো তৃষ্ণাৰ্ত মুমিনকে পানি পান করাবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে সিলমোহর করা খাঁটি ‘রাহিক মাখতুম’ পান করবেন। যে মুমিন কোনো বস্ত্রহীন মুমিনকে পোশাক দান করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের সবুজ পোশাক পরাবেন।’ আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি গারিব। এ হাদিসটি আতিয়া হতে আবু সাঈদ (রা.) সূত্রে মাওকুফরুপে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের মতে মাওকুফ বর্ণনাটি অনেক বেশি সহিহ ও সমাঞ্জস্যপূর্ণ।’ (তিরমিজি: ২৪৪৯)
অন্য হাদিসে মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম অন্য মুসলিমকে পোশাক পরিধান করায়, তখন দানকারী আল্লাহর হেফাজতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত দানকৃত ব্যক্তি সে পোশাকের টুকরাবিশেষও ব্যবহার করতে থাকে। অর্থাৎ কাপড়টি পরিত্যক্ত হওয়া পর্যন্ত দানকারীকে আল্লাহ তাআলা বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করেন।’ (তিরমিজি: ২৪৮৪)
আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদের জন্য শীতকাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইসলামে এটি ইবাদতের উপযুক্ত মওসুম হিসেবে বিবেচিত। কাজেই শীত মওসুমকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো আমাদের প্রত্যেকের উচিত। শীতে অসহায় ও দরিদ্রদের বস্ত্রদান ছাড়াও সহজে পালনযোগ্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে। সেগুলোর প্রতিও মুমিনদের যত্নশীল হওয়া উচিত।
যেমন- ঠাণ্ডার কষ্ট সহ্য করে ইবাদত করা। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডার সময়ের নামাজ আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বুখারি: ৫৭৪) হাদিসে দুই ঠান্ডার নামাজ বলতে উদ্দেশ্য হলো- এশা ও ফজর। হাদিসে দেখা যাচ্ছে, শুধু ঠাণ্ডার কারণে ফজর ও এশার নামাজের সওয়াব ও ফজিলত বেড়ে যায় বহুগুণে।
এমনকি শীতের সময় সুন্দরভাবে অজু করলেও গুনাহ মাফ হয়ে যায়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন বিষয়ের সংবাদ দেব না, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের গুনাহগুলো মুছে দেবেন এবং তোমাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করবেন? সাহাবায়ে-কেরাম বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসুল! নবী (স.) বললেন, (শীত বা অন্য কোনো) কষ্টকর মুহূর্তে ভালোভাবে অজু করা।’ (মুসলিম: ২৫১)
শীতকালে আরেকটি সহজ আমল রোজা রাখা। শীতের দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হয় না। তাই কারো যদি কাজা রোজা বাকি থাকে, সেগুলো আদায় করে নেওয়ার অপূর্ব সুযোগ শীতকাল। আমের ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘শীতল গনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা।’ (তিরমিজি: ৭৯৫) বেশি বেশি নফল রোজা রাখারও এটি সুবর্ণ সময়। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘বিশুদ্ধ নিয়তে যে ব্যক্তি এক দিন রোজা রাখল, মহান আল্লাহ প্রতিদানস্বরূপ জাহান্নাম এবং ওই ব্যক্তির মাঝখানে ৭০ বছরের দূরত্ব তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি: ২৮৪০)
এছাড়াও শীতের রাত দীর্ঘ হওয়া অধিক ইবাদতের সুযোগ লাভ হয় শীতকালে। রাতের ইবাদতের ফজিলত অনেক বেশি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় মুত্তাকিরা থাকবে জান্নাতসমূহে ও ঝর্ণাধারায়, তাদের রব তাদের যা দেবেন তা তারা খুশিতে গ্রহণ করবে। এর আগে এরাই ছিল সৎকর্মশীল। রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাত।’ (সুরা জারিয়াত: ১৫-১৭)
প্রকৃত মুমিন বান্দারা কখনও শীতকালের ঠাণ্ডাকে ভয় পান না, বরং জাহান্নামের শাস্তিকেই বেশি ভয় পান। এ কারণেই প্রিয়নবী (স.)-এর ঘোষণা অনুযায়ী জান্নাত প্রাপ্তি ও গুনাহ থেকে মুক্তি লাভে শীতকালকে ইবাদতের বসন্তকাল হিসেবে বিবেচনা করেন মুমিনরা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শীতকালে বেশি বেশি ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।