গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রখ হাসিনার দেশ ত্যাগ এর পর গত ৮ আগস্ট শপথের মাধ্যমে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসেন। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে দেশে আওয়ামী সরকারের সময়ে রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ায় ব্যাপক চ্যালেঞ্জের কবলে পড়েছে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার, তাদের পক্ষে দেশ পরিচালনাও ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতিতে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকারের যা যা করা দরকার তাই করবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক।
সোমবার জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অনেক বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে হাজারের বেশি হত্যা ও দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে জাতিসংঘের কোনো উদ্বেগ আছে কিনা?
প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন ডুজাররিক বলেন, ‘আমাদের কোনো সন্দেহ নেই যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক এবং মানবিক দিক থেকে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্যে দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তারা আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার অনুসরণ করে যা যা করা সম্ভব তাই করবে বলে আমাদের আশা।’
এদিকে তাৎপর্যপূর্ণ এক সফরে ঢাকা আসছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন। একাধিক দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র রাতে গণমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৩০শে আগস্ট আন্তর্জাতিক গুমবিরোধী দিবসের আগেই গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গত ১৫ বছর ধরে গুমবিরোধী সনদে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার তাগিদ ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার তা অগ্রাহ্য করে চলেছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের অবসান এবং পরবর্তীতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো রকম পর্যবেক্ষণ বা শর্ত ছাড়াই ওই সনদে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গুমবিরোধী সনদে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার ঢাকা সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্মরণ করা যায়, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ৭ শতাধিক মানুষ গুমের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। অনেকে প্রাণে বাঁচলেও এখনো ১৫০ জনের বেশি মানুষের খোঁজ নেই।
গুমবিরোধী সনদটি ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ৩২ দেশ এটি অনুস্বাক্ষর করার পরে ২০১০ সালে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়। সামগ্রিকভাবে এই সনদের লক্ষ্য গুম বন্ধের পাশাপাশি এই অপরাধের জন্য দায়মুক্তি বন্ধ করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়া। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৭৫টি দেশ এই সনদে যুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক ৯টি সনদের ৮টিতে সই করেছে। কিন্তু গুমের সনদে সমর্থন করেনি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পাশাপাশি গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে চায়। এ লক্ষ্যেই গুমবিরোধী সনদে যুক্ত হওয়ার ওই ত্বরিত সিদ্ধান্ত। রাজনীতি সচেতন তবে অ্যাক্টিভিস্ট ডিপ্লোমেট নয় এমন পেশাদাররা বলছেন, সনদ সই করার পর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের জন্য সরকার বা এর যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনার বিষয়ে ভূমিকা রাখবে জাতিসংঘ।