টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে আসা পানিতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে নোয়াখালীতে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। বানভাসিদের জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রধান সড়কের আশপাশে সহযোগিতা পেলেও প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা। সেখানে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট। স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি ক্ষুধার্ত অধিকাংশ শিশু। ফলে অধিকাংশ জায়গায় দেখা দিয়েছে ত্রাণের জন্য হাহাকার।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীর ৮ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ১ হাজার ১৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন দুই লাখ ১৬ হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ৮৮২ টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫ লাখ টাকার গো খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই বন্যার পানি বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে জেলার সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সদর, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার বন্যার পানি। এসব উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণই এখন পর্যন্ত পৌঁছায়নি। ফলে বন্যার্ত মানুষ সীমাহীন কষ্টে দিন যাপন করছেন।
বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জয় কৃষ্ণরামপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় নিয়েছেন বিধবা হোসনে আরা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে থাকার মতো, ঘুমাইবার মতো অবস্থা নেই। আল্লাহ আমাদের এভাবে রাখছে। একটা কাপড় একটা জামা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আইসি। আমার সামর্থ্য নাই ঘরবাড়ি করার। ছেলেরাও গরিব। কিচ্ছু করতে পারবে না তারা।
সাহেরা খাতুন নামে আরেকজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোডে-ঘাটে (রাস্তায়) পানি। আমাদের স্বামীরা কর্ম করতে পারে না। আমরা এখন আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। অনেক কষ্ট করে আছি। কেউ খোঁজ খবর নেয় না। আমরা এখন কীভাবে বাঁচবো জানি না। আমরা সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা চাই। অনেকে সহায়তা পায় শুনি, কিন্তু আমরা চোখে দেখি না। আমরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে উপোস থাকি। কোনো উপায়ে আমরা সাহায্য পাই না।
বন্যা না কমলে সব শেষ হয়ে যাবে উল্লেখ করে বৃদ্ধা শাহ আলম বলেন, এত পানি আমি ৭০ সালেও দেখি নাই। ২০২৪ সালে পানি আর পানি। আমাদের ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে। যদি বন্যা না কমে, আমাদের ঘর বাড়ি সব উল্টে যাবে।