অপারেশ ‘রাইজিং লায়ন’-এর অংশ হিসেবে গত ১৩ জুন শুরু হওয়া ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) শীর্ষ নেতারা এবং পরমাণু কর্মসূচিতে যুক্ত প্রধান বিজ্ঞানীদের টার্গেট করে হামলা চালায়। ইরানও ড্রোন, মিসাইলসহ অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে জবাব দিতে শুরু করে। এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনা তৈরি করেছে। আঞ্চলিক এই সংঘাতে বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলোও জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের এই মুহূর্তে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সীমান্তে ভিড় করছেন।আল জাজিরার খবর অনুযায়ী, ইরানের হামলায় ৮ হাজারের বেশি ইসরায়েলি ঘরবাড়িছাড়া হয়েছেন। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি ইসরায়েলি।এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে এখন দুটি জিনিস লক্ষ করা গেছে। ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে নিষিদ্ধ হওয়ায় আল জাজিরা জর্ডান থেকে এক প্রতিবেদন এ দুটি বিষয় জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, সামরিক গোয়েন্দা, দেশটির মন্ত্রীরা—সবাই নিজেদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ছবি আঁকতে মরিয়া। কারণ তাদের আছে চৌকস বিমান বাহিনী, যারা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম এবং ইরানের আকাশসীমার ওপর গিয়ে প্রায় অবাধে উড়তে সক্ষম।
অন্যদিকে এই যুদ্ধে ইসরায়েলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নিয়েও গুরুতর বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সেটা হলো— যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ না করে এবং ইরানে আঘাত না করে, তবে এ যুদ্ধ হতে পারে দীর্ঘ।সম্প্রতি তেল আবিবের বিভিন্ন সড়কে বিলবোর্ডের দেখা মিলেছে, যেখানে যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে লেখা : ‘মি. প্রেসিডেন্ট, ফিনিশ দ্য জব’। তার মানে ইরান ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দ্রুত কাজ শেষ করার আহ্বান জানান ইসরায়েলের নাগরিকরা।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েলের দক্ষিণে ইরানের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতাল পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলের অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেন তিনি। এটাকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলেও অভিহিত করেছেন এই ইহুদিবাদী নেতা।এ সময় চলমান সংঘাত কত দিন স্থায়ী হবে, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি তা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তবে সপ্তাহ, এমনকি মাসও লাগতে পারে বলে জানান।
সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। কিন্তু তারা ইতোমধ্যেই অনেক সাহায্য করছে। কারণ এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত খুবই ব্যয়বহুল হবে, জড়িত সবার পক্ষে সহ্য করা খুবই কঠিন।’ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু ছিলেন কিনা জানতে চাইলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কেউই নিরাপদ নয়’।
আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো এখনো দুই সপ্তাহের ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই ইরানে হামলা চালাতে পারেন।বিশারা বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) এই সময়সীমাকে হয়তো একটা কৌশল বা ছল হিসেবে ব্যবহার করছেন, যাতে তার আসল পরিকল্পনা আড়াল থাকে এবং তিনি হয়তো আগামীকালই সেই হামলা চালাতে পারেন।’