সরকার গৃহীত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে সুবিধাভোগীর তালিকায় গ্রামে বসবাসরত সবচেয়ে হতদরিদ্র পরিবার এবং বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্ত বা অসচ্ছল বয়স্ক নারীপ্রধান পরিবারসহ যেসব দুস্থ পরিবারে শিশু বা প্রতিবন্ধী আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। কিন্তু কিছু কিছু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে তালিকায় ঢুকে পড়েছেন অনেক ভুয়া বিধবা। স্বামী থাকতেও তাঁরা বিধবা ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য-মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা এ তালিকা নিয়মিতভাবে মনিটর করছি। আমাদের নজরে আসায় ইতিমধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৫০ লাখ কার্ডের ৯ লাখ ভুয়া কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্ত হওয়ার নামে কেউ ভুয়া কার্ড করে থাকলে এ দফায় তারা ধরা খাবে এবং কার্ড বাতিল করা হবে। সরকারের এই কর্মসূচির সুফল নিশ্চিত করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এই কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত বছরের ১ মার্চ থেকে এই চালের দাম ১৫ টাকা করা হয়েছে। করোনাকালে এই কর্মসূচির আওতায় দেশে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া শুরু হলে অনেক স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এসব চাল আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনেকের নামে দুদকে মামলাও হয়েছে। এ অবস্থায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে খাদ্য অধিদপ্তর সারা দেশে ভুয়া কার্ড খুঁজতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় নানা ধরনের শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়।
ঢাকা বিভাগের একজন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, সরকার যে জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করেছে, তা ব্যাহত হচ্ছে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধির কারণে। প্রকৃত হতদরিদ্র অনেক পরিবার এ কর্মসূচির সুফল পাচ্ছে না। সুবিধাভোগীর তালিকা তৈরি করেন ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। এর অনুমোদন দেয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বাধীন উপজেলা কমিটি। স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি তাঁদের সমর্থক ও আত্মীয়স্বজনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন। তাঁরা খাদ্য কর্মকর্তার যোগসাজশে নিজের আত্মীয়-স্বজন যাঁরা চাকরির সুবাদে গ্রামের বাইরে থাকেন, তাঁদের এনআইডির ফটোকপি নিয়ে তালিকায় নাম ঢুকিয়ে দেন। ওই কার্ডের চাল নিজেরা ভাগাভাগি করে নেন। খাদ্য বিভাগের একাধিক তদন্তে এ ধরনের ঘটনা উঠে এসেছে।
খাদ্য অধিদপ্তর এবার ভুয়া বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, অনেকে তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা বা বিপত্নীক হিসেবে বৈবাহিক অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য দিয়েছেন। তাঁদের চলতি মাসের মধ্যে উপযুক্ত প্রমাণ, যেমন তালাক নিবন্ধন সনদ, স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুসনদ বা অন্য কোনো বৈধ সনদ দিতে হবে। এসব সনদ যাচাই সাপেক্ষে প্রদত্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে পরিমার্জিত তালিকা প্রণয়নের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কমিটিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
দুর্নীতি প্রতিরোধ নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা মনে করেন, এ ধরনের তালিকার যথার্থতা নিয়মিত যাচাই করা উচিত। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যাদের দায়িত্ব ছিল সুবিধাভোগীর তালিকা প্রণয়নের, তারা ঠিকমতো সেই কাজ করল কি না, তা নজরদারি করা দরকার। কারও গাফিলতির কারণে যদি অযোগ্য ব্যক্তি কর্মসূচির সুবিধা পান, তাহলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারও শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করি।