ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
তিনি বলেন, একটি সরকার এ দেশে এসেছে, সে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা মুখে বলে গণতন্ত্র, বাস্তবে করেছে একদলীয় শাসন। তারা এবার করেছে বাকশাল-২। এটা আমার কথা নয়, এটা বিশ্ববাসীর কথা।
তিনি আরও বলেন, আজকে আপনারা দেখেছেন কিভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা এ দেশ থেকে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। মেগা উন্নয়নের নামে কিভাবে মেগা দুর্নীতি হয়েছে।
মঈন খান বলেন, ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য যারা বিরোধী দল তাদের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে। তাদের ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে তাদের আসামি বানানো হয়েছে। এখানে যদি মানুষের ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ না থাকে। এ দেশে যদি মানুষের গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ না থাকে, তাহলে আজকে যারা কবরে শায়িত মুক্তিযোদ্ধা, তাদের প্রশ্ন, কেন তারা এ দেশটি স্বাধীন করেছিলেন। সেই প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগ সরকারকে দিতে হবে।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। এটা আজকে অত্যন্ত স্পষ্ট, যখন সেই ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপরে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেদিন আজকের আওয়ামী লীগ, যারা আজকে নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে, যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি বলে দাবি করে, তারা সেদিন পলায়নপর ভূমিকা নিয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগ দিতে পারবে, আমরা সেই উত্তর দিতে চাই না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, যে কারণে স্বাধীনতার ঝাণ্ডা উঁচু করে তুলে ধরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেদিনের মেজর জিয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করে, পাকিস্তানের একটি প্রশিক্ষিত অত্যাচারী হায়েনার মতো অত্যাচারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রকাশ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূচিত হয়েছিল। সারা বিশ্বের মানুষ জেনেছিল, একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এর সঙ্গে আরেকটি কথা যোগ করতে চাই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি স্বয়ং অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। পালিয়ে লুকিয়ে থাকেননি কলকাতায় আরাম-আয়েশে। তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধে জয়লাভ করে ১৬ ডিসেম্বর ঘরে ফিরেছেন। বাংলাদেশের মানুষ ভালোবেসে তাকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাব বীর উত্তম উপাধি দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আরও একটি প্রশ্নের উত্তর আপনাদের দিতে চাই, যে প্রশ্ন আপনারা করেছেন, শুধু তারা নয়। আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি তাদের রাষ্ট্রীয় ভবনে রাষ্ট্রীয় ভোজসভা দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে তাকে সম্মান জানিয়েছেন।
এনিয়ে বিতর্কের সুযোগ আছে কি না প্রশ্নে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বিতর্ক তোলা যাবে না কেন। আমরা তো স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। যে যেটা বলতে চায় বলবে। আওয়ামী লীগের কেউ কিছু বললে আমরা তার টুঁটি চেপে ধরি না। কাজে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ গণতন্ত্রে থাকবে। কিন্তু ইতিহাসের যে সত্য, সেটি ইতিহাসই নির্ধারিত করে। আজকে বলে দিতে হবে না, কারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখসমরে যুদ্ধ করে এ দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।
তিনি বলেন, আমি স্কুলের পাঠ্যবইয়ে যত গল্প লিখি না কেন, টেলিভিশনে, মাইকে যত বক্তব্য দিই না কেন, এসব মিথ্যার বেসাতি যেটা আওয়ামী লীগ করে যাচ্ছে সেটা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ আমলে ঔপনিবেশিক শাসকদের একটা নীতি ছিল, যেটা সারা বিশ্বে শত বছর ধরে পালিত হয়েছে, বাইরে থেকে এসে যদি কোনো ক্ষমতা দখল করতে হয়, ক্ষমতা পরিচালনা করতে হয়, তাহলে সেখানে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করো। মানুষকে বিভক্ত করে এক পক্ষকে আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দাও। আজকে দুঃখ ও লজ্জার সঙ্গে বলতে হয়, আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার, এমন এক সরকার যে দেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। যে কারণে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য বাংলাদেশের মানুষদের দুটি ভাগে ভাগ করে দিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিতে চায়। তাদের এ চাওয়া কোনোদিন পূরণ হবে না।
এসময় তার সঙ্গে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।