সব দেখে মনে হচ্ছে, পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো উপায় নেই। শনিবার রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলী খান চাতা এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বিরুদ্ধে ‘বোমা ফাটানোর’ মতো এক অভিযোগ তুলেছেন। চাতার এ অভিযোগ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনতিবিলম্বে ও স্বাধীনভাবে একটি নিরীক্ষার দাবিকে আরও জোরালো করেছে। নির্বাচনের ফল জালিয়াতির ‘বন্দোবস্ত’ করে দেওয়ার জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেছেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। বলেছেন, এ অপরাধের জন্য যা শাস্তি হয় মেনে নেবেন। একই সঙ্গে ‘জনগণের দেওয়া রায় চুরির দায়ে’ দেশের প্রধান বিচারপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দায়ী করেছেন তিনি।
গত ১০ দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের তোলা নানা অভিযোগকে ভিত্তি দিয়ে লিয়াকত আলী চাতা বলেছেন, রাওয়ালপিন্ডির নির্বাচনী আসনগুলোতে যেসব প্রার্থী বড় ব্যবধানে জয়ী হচ্ছিলেন, সেসব প্রার্থীকে পরাজিত দেখানো হয়েছে। আর যেসব প্রার্থী হেরে যাচ্ছিলেন, তাঁদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ নির্দেশ তিনিই দিয়েছিলেন।
লিয়াকত আলী চাতা অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘এই অপকমের দায় আমি নিচ্ছি এবং আপনাদের জানাচ্ছি যে এর সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দেশের প্রধান বিচারপতি সম্পূর্ণভাবে জড়িত।’
একজন কমিশনার সাধারণ কোনো কর্মকর্তা নন। রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর আমলাদের মধ্যে রয়েছেন তাঁরা। পুরো প্রশাসন দেখভাল করার জন্য রাষ্ট্র সরাসরি এসব কর্মকর্তা বাছাই করে থাকে। পদাধিকারবলে তাঁরা অনেক ক্ষমতার প্রয়োগ করেন এবং রাষ্ট্রযন্ত্রে বড় প্রভাব বিস্তার করেন। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে চাতার এই ‘স্বীকারোক্তি’ একটা ঝড় বইয়ে দিয়েছে। ক্ষমতাধরদের চাপের মুখেও নতিস্বীকার না করে ইতিহাসের সঠিক পথে থাকাকে বেছে নেওয়ার নজির হিসেবে বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছে এ ঘটনা।
তবে তৃতীয় কিছু আছে কি না, এ প্রশ্ন না করে শুধু ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’–এর মধ্যে একটা বেছে নেওয়ার প্রবণতার ব্যাপারেও আমাদের অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। আমাদের মানবজাতির মধ্যে এই প্রবণতা আছে যে আমরা যেটা সত্য বলে ধরে নিই, এ রকম কিছু এলে প্রশ্নাতীতভাবে তা বিশ্বাস করি। এ কারণে এটা সবার জন্যই ভালো যে লিয়াকত আলী চাতার তোলা অভিযোগ অতিসত্বর ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে দেখা এবং তদন্তে যদি এর সাপেক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেটা জনগণের সামনে প্রকাশ করা। তিনি যেসব অভিযোগ তুলেছেন, সেগুলো খারিজ করে দেওয়ার উপায় নেই। একই সঙ্গে (দেশে) ক্রমে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রত্যেককে অবশ্যই বাড়তি বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।
এবারের নির্বাচন সম্ভবত গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচনের নজির হয়ে থাকবে। এই অবিস্মরণীয় কলঙ্কের দায় মূলত নির্বাচন কমিশনের ওপরই বর্তাবে। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের সব আইনি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ উপায়ে জনগণের দেওয়া এই ক্ষমতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে নির্বাচন কমিশন।
ভোট গণনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতাই মূলত (দেশে) এমন এক বিশৃঙ্খলা ডেকে এনেছে, যেটা বহন করার মতো অবস্থায় (দেশ) নেই। যেভাবে অনিয়ম হতে দেখেছে, তাতে করে বিভিন্ন অংশীজন এখন নির্বাচনের ফল মেনে নিতে আগ্রহী নয়। জনরোষ আমলে নিয়ে ফল গণনার বিষয়টি দ্রুত যাচাই করে দেখা হবে জানিয়ে এই অংশীজনদের আশ্বস্ত করার বদলে নির্বাচন কমিশন নীরব থাকার পথ বেছে নিয়েছে। এখন রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এর চেয়েও গুরুতর আরও নানা অভিযোগ উঠছে। নির্বাচন কমিশনের ‘ঘুম’ অবশ্যই ভাঙতে হবে। তাদের নীরবতা (দেশের জন্য) অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসছে।