ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার প্রশ্নে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জগতের অবস্থান মোটামুটি এক রকম থাকলেও বাকি বিশ্ব কমবেশি উদাসীনতা দেখিয়ে আসছে। বিশেষ করে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নেয়নি। বৃহত্তর সমর্থনের অভাবে প্রায় দুই বছর ধরে আক্রান্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইউক্রেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে যথেষ্ট সমর্থন ও সহায়তা পাচ্ছে না।
এবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে যোগ দিতে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি সেই অবস্থা কিছুটা হলেও বদলানোর চেষ্টা করছেন।
রবিবার ৮০টিরও বেশি দেশ সেখানে ইউক্রেন সংকট সমাধানে শান্তির ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা করেছে। তবে রাশিয়াকে সেই আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বরং স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে জেলেনস্কির ১০ দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে ৮৩টি দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এই নিয়ে চতুর্থবার আলোচনায় বসেছেন। এর আগে কোপেনহেগেন, জেদ্দা ও মাল্টায় তাঁরা মিলিত হয়েছিলেন।
জেলেনস্কির দপ্তরের কর্মকর্তা আন্দ্রি ইয়ারমার্ক ও সুইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইগনাৎসিও কাসিস যৌথভাবে ডাভোসের আলোচনার সভাপতিত্ব করেন।
এক সাংবাদিক সম্মেলনে সুইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঠিক সময়ে রাশিয়াকেও সেই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। তবে বর্তমানে ইউক্রেন ও রাশিয়া এখনো সেই পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত নয়। তবে কাসিসের মতে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা ব্রিকস গোষ্ঠীর সদস্য ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা আলোচনায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইয়ারমাক বলেন, ইউক্রেনে সামগ্রিক, ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি ফেরানোর উদ্দেশ্যে খোলামেলা পরিবেশে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, শান্তি অর্জনের উপায় নিয়ে এখনো মতভেদ রয়েছে। তবে স্বাধীনতা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদ সম্পর্কে নীতিগত ঐকমত্য রয়েছে। ইয়ারমাক আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজস্ব অবস্থান বুঝিয়ে বলার উদ্যোগ নিচ্ছে।
তার আগেই ইউক্রেনের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন জোরালো করতে এই আলোচনা কিছুটা সহায়ক হবে বলে কিয়েভ আশা করছে। রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ দেশ চীন রবিবারের আলোচনায় যোগ না দিলেও সম্মেলনে কোনো না কোনোভাবে সে দেশকেও ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে শামিল করা হবে বলে সুইস কর্তৃপক্ষ আশা করছে।
জেলেনস্কি ২০২২ সালে তাঁর ১০ দফার শান্তি পরিকল্পনা পেশ করেছিলেন। সেই ফর্মুলা অনুযায়ী রাশিয়াকে ইউক্রেনের সমগ্র ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তাও দাবি করছেন তিনি। বলা বাহুল্য, রাশিয়া এমন প্রস্তাব শুরু থেকেই নাকচ করে আসছে। আলোচনায় অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবে মস্কো পাল্টা দাবি পেশ করেছে। সবার আগে ইউক্রেনে পশ্চিমা বিশ্বের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার দাবি করছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।