বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও উন্নয়ন সমন্বয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান মনে করেন, চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি এবং সামাজিক সুরক্ষা নীতির মধ্যে সমন্বয় জরুরি।
‘বছর শুরুর ভাবনা: বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার অনলাইনে এক জনবক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান তাঁর বক্তব্যে নতুন বছরে সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের অর্থনীতির প্রধানতম সমস্যা ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ধারাবাহিক টাকার অবমূল্যায়ন। ২০২৪ সালে এসে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে টাকা ও ডলারের জন্য একটি ‘স্মার্ট এক্সচেঞ্জ রেট’ তৈরি করা প্রয়োজন। এতে বিনিময় হারকে সত্যিকারের বাজার মূল্যের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে এবং আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।
আতিউর রহমান বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ভারসাম্য রক্ষায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স আয় বাড়াতে হবে। যারা টাকা পাঠাচ্ছেন, তাদের ২ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। অন্যদিকে, বৈদেশিক মুদ্রার বন্ডে বিনিয়োগ বাড়াতে নিয়মকানুন শিথিল করতে হবে। এতে প্রবাসীদের বন্ড কেনার আগ্রহ বাড়বে। তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির রক্ষাকবচ কৃষির সুফল ধরে রাখতে হলে এ খাতে বিশেষ করে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি আয়ের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। অর্থনীতির আরেক চালিকাশক্তি এমএসএমই খাতের প্রসারে সরকারকে এ খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, বিদেশে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর হার বাড়ানো গেলে রেমিট্যান্স আয় অনেক বাড়ত। তিনি মনে করেন, বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবচেয়ে বড় স্তম্ভ হচ্ছে স্মার্ট ইকোনমি এবং তা করতে হলে ক্যাশলেস ট্রানজেকশন সুবিধার বিস্তার করতে হবে। ডিজিটাল ডিভাইসের কর কমানোর সুপারিশ করেন তিনি।
আরেক প্যানেল আলোচক বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. এসএম জুলফিকার আলী বলেন, নতুন বছরে নতুন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু দরিদ্র নয় এমন জনগোষ্ঠী নতুন করে যাতে দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে না আসে, সেদিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, ব্যাংকার, সাংবাদিক, উন্নয়নকর্মী ও ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেন। সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের ইমেরিটাস ফেলো ও বিআইজিডির ভিজিটিং ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলী।