আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে রাজধানীর ফুটপাথ, সড়ক ও মহাসড়ক দখল করে নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরি করছেন আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী। তাতেই খান্ত হননি তারা, কোথাও কোথাও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ঢেকে দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করছেন না। এমনকি ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। দেখেও যেন না দেখার ভান করছে নির্বাচন কমিশন।
সড়ক ও ফুটপাথের ওপর বাঁশের খুঁটি পুঁতে অস্থায়ী এসব কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। কার্যালয়গুলোতে চেয়ার-টেবিল ও শামিয়ানা থাকলেও নেতাকর্মীদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। কার্যালয়গুলো প্রার্থীর পোস্টারে ঢাকা। এর পাশাপাশি ব্যানারে স্থানীয় নেতাদের নামও রয়েছে। আওয়ামী লীগের মহানগর নেতারা বলছেন, ফুটপাথ ও সড়কে নির্বাচনী ক্যাম্প না করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও কিছু অতিউৎসাহী লোকজন নেতাদের খুশি করতে এসব কাজ করছেন।
নেতাদের এমন বক্তব্যের মধ্যেই মঙ্গলবার রাজধানীর জুরাইন এলাকায় সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে নির্বাচনী কার্যালয় নির্মাণ শুরু করেছেন ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানমের সমর্থকরা। বাঁশের খুঁটি ও কাপড় দিয়ে তৈরি করা এই ক্যাম্পের কারণে ফুটপাথে এখন মানুষের হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে মূল সড়ক সংকুচিত হওয়ায় যানবাহন চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই এই এলাকার সড়কগুলো সংকীর্ণ। তার ওপর যদি রাস্তার পাশে ও মাঝে নির্বাচনী অফিস তৈরি করা হয়, তাহলে আমরা যাব কোথায়।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দক্ষিণ পাশে ফুটপাথের ওপর ঢাকা-১১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ওয়াকিল উদ্দিনের নির্বাচনী ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এতে ফুটপাথ ছাড়াও সড়কের পাশে থাকা দুটি দোকান ঢেকে গেছে। তবে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ওই দোকানি।
ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট রিপোর্ট নিতে আসা সালেহা পারভীন নামের এক নারী জানান, ফুটপাথে নির্বাচনী কার্যালয় থাকলেও লোকজন নেই। নির্বাচনের আগে এখানে দোকান বসত। তাই নির্বাচনী কার্যালয় থাকা বা না থাকায় আমাদের কোনো উপকার নেই।
শাহজাদপুর ও নতুন বাজার বাস্টস্ট্যান্ডের মাঝামাঝি ফুটপাথের একপাশে গুলশান থানা আওয়ামী লীগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড শাখার কার্যালয়। এর সামনের বাকি অংশ দখল করে তৈরি করা হয়েছে ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাতের নির্বাচনী কার্যালয়।
গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টের সামনের ফুটপাথে ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রচারের জন্য বিশাল তোরণ তৈরি করা হয়েছে। সেগুনবাগিচা এনবিআর গেটের সামনের সড়কে একই প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে।
ঢাকা-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার জন্য পল্লবীর সি, ডি এবং ই ব্লকের সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। ডি ব্লকের ক্যাম্পে ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার নির্বাচনী ব্যানেরের নিচে পল্লবী থানা ১৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা ইকবাল হাওলাদারের নাম লেখা রয়েছে।
রূপনগর ঝিলপাড় বস্তির সামনে ফুটপাথ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের রূপনগর শাখা ও সরকারি রূপগঞ্জ মডেল স্কুলের সামনের ফুটপাথ এবং সড়ক দখল করে ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ঢাকা-১৩ আসনের মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটির সামনে সড়ক-ফুটপাথের জায়গা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানকের নির্বাচনী ক্যাম্প তুলে দেওয়া হয়েছে। গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে এ ক্যাম্পটি তুলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এই আসনের মোহাম্মদপুরের শের শাহ্ সুরি রোড এবং লালমাটিয়া বি ব্লকে ফুটপাথ ও সড়কের ওপর জাহাঙ্গীর কবির নানকের নির্বাচনী ক্যাম্প দেখা গেছে।
উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরে বাংলাদেশ মেডিকেলের পাশের সড়ক দখল করে নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরি করছেন ঢাকা-১৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরী। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক।
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু প্রচার ও সভা-সমাবেশে ব্যস্ত থাকার কারণে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের বলে দিয়েছি যাতে ফুটপাথ এবং সড়কে কোনো ক্যাম্প না করে। সড়ক বা ফুটপাথে ক্যাম্প পেলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। এরই মধ্যে উচ্ছেদ শুরু হয়ে গেছে।’
ঢাকা-৮ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা যখনই এ ধরনের খবর পাচ্ছি, সঙ্গে সঙ্গে অপসারণের উদ্যোগ নিচ্ছি। নেতাকর্মী ছাড়াও কিছু অতিউৎসাহী লোকজন নেতাদের তোষামোদি করতে এগুলো করে থাকে। আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়Ñ এমন কোনো কর্মকাণ্ড আমরা প্রশ্রয় দিচ্ছি না।’
নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলে প্রশাসন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।