ইসরায়েলের টানা বোমাবর্ষণে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিনের প্রাক্কালেও আরেকটি রক্তক্ষয়ী রাত দেখল ফিলিস্তিনের গাজা। গতকাল সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত রবিবার রাতেই ইসরায়েলি বিমান হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়। বিকেল নাগাদ ২৪ ঘণ্টায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় আড়াই শতে, যার বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এদিকে এই অব্যাহত বেসামরিক প্রাণহানির মধ্যেও যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল বিকেলে বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় তখন পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া ৫০০ জন আহতও হয়েছে। এর মধ্যে গাজার মধ্যাঞ্চলের আল-মাগহাজি শরণার্থী ক্যাম্পেই অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল বলেছেন, গাজা যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। তিনি ইসরায়েল সরকার যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে—এ ধরনের কথাবার্তাকে ‘মিথ্যা মিডিয়া’ জল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার বড়দিনের উৎসবের দিনটিতেও ইসরায়েলের বোমা থেকে রেহাই পায়নি গাজা। খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান বেথলেহেম শহরে যার অবস্থান গাজার অদূরে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে।
যুদ্ধের ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিক্রিয়ায় সেখানে এবার খুবই সীমিতভাবে বড়দিন উদযাপিত হচ্ছে। গাজা ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে খ্রিস্টানের সংখ্যা নগণ্য হলেও বড়দিনের সময় সারা বিশ্ব থেকে অনেকেই পবিত্র ভূমি গণ্য বেথলেহেমে যায়।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নতুন একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মিসর এগিয়ে নিয়েছে বলে ইসরায়েল ও আরব গণমাধ্যমে খবরে প্রচারিত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে গাজার মাগহাজি শরণার্থী শিবির এলাকা থেকে কাছের আল-আকসা হাসপাতালে শিশুসহ বহু রক্তাক্ত মানুষকে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। উত্তর গাজায় জাবালিয়া ক্যাম্পেও রবিবার দিবাগত রাতে এক পরিবারের ১০ জন ইসরায়েলি বোমায় প্রাণ হারিয়েছে।
পৃথক হামলায় খান ইউনিসে নিহত হয়েছে অন্তত ১৮ জন। গতকাল ভোরের আলো ফোটার আগেই গাজার আল-জুয়াওয়াইদা এলাকার একটি বাড়িতে বোমা হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়।
হামাসকে দমনের নামে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গাজার অধিবাসীরা। একদিকে টানা বোমাবর্ষণ, অন্যদিকে খাদ্যাভাবে দিশাহারা হয়ে পড়েছে উপত্যকাটির মানুষ। রাফার সড়কে ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় থাকা এক বাসিন্দা জানান, তাঁদের সন্তানরা খাবারের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরার পথে। সূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা, এএফপি