কর্নেল আসিমি গোইটা যখন ২০২১ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মালির ক্ষমতা দখল করেন, তখন তার সমর্থকদের হাতে দেখা গিয়েছিল রাশিয়ার পতাকা। এর এক বছর পর ক্যাপ্টেন ইবরাহিম ট্রাওরে বুরকিনা ফাসোতে একই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তার অনুসারীদের হাতেও দেখা গিয়েছিল রুশ পতাকা।
সাদা, নীল আর লাল রঙের রুশ পতাকা এখন সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে খুবই চোখে পড়ে এবং চাদ কিংবা আইভরি কোস্টের বিক্ষোভেও এই পতাকা দেখা গেছে।
রাশিয়া এখন আফ্রিকার দিকে নজর দিয়েছে এবং তার ভাড়াটে সৈন্যদের জন্য উর্বর ভূমি খুঁজে পেয়েছে। আফ্রিকার সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের শক্তি সেখানে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
রুশ সৈন্যদের সাথে ইউক্রেন যুদ্ধে উপস্থিতির জন্য পরিচিত ওয়াগনার গ্রুপ বেশ জোরেশোরেই মালি এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ঢুকে পড়েছে। বুরকিনা ফাসোতে তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে এবং মোজাম্বিক বা মাদাগাস্কারের মতো দেশেও তাদের কিছু কার্যকলাপ রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
এর শাখা-প্রশাখা অবশ্য শুধু ফরাসি-ভাষী আফ্রিকার মধ্যেই সীমিত না। উত্তরে লিবিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াগনার গ্রুপের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অঞ্চলের কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এরা সেখানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা উসকে দিতে সহায়তা করছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজেরাই সরাসরি এসব কাজে জড়িয়ে পড়েছে।
এদের কার্যকলাপে প্রায়ই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটছে। জাতিসঙ্ঘের মতো নানা প্রতিষ্ঠান এদের কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর সিনিয়র গবেষক পল স্ট্রোনস্কি বলেছিলেন, ‘রাশিয়া একটি পরিপূর্ণ প্যাকেজ উপহার দেয়। তারা যা অফার করে তার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা পরিষেবা, রাজনৈতিক পরামর্শ, মিডিয়া সহায়তা ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচার এবং অস্ত্র বিক্রি। এর বিনিময়ে ওয়াগনার গ্রুপ রাজনৈতিক প্রভাব অর্জন করে এবং এসব আফ্রিকান দেশের সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করার অধিকার পায়। তবে রাশিয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষার সীমানা সেখানেই শেষ না।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিশ্বাস করে, মস্কো ‘আফ্রিকাতে পশ্চিমাবিরোধী রাষ্ট্রগুলোর একটি কনফেডারেশন’ তৈরি করতে চাইছে। নিরাপত্তার ফাঁক-ফোকরের ভেতর দিয়ে স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেসব দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।
প্রভাবশালী সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট বেশ কিছু গোপন সরকারি দলিল দেখতে পেয়েছে যেখানে এই দাবি করা হয়েছে।
এসব অভিযোগের জবাব পেতে বিবিসি রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রধান কূটনীতিক সের্গেই লাভরভ বেশ ক’টি আফ্রিকান দেশ সফরের পর তাদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে, ‘ওয়াশিংটন, লন্ডন এবং ব্রাসেলসের রুশ-বিরোধী মহোৎসব সত্ত্বেও আমরা প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করছি এবং ব্যাপক অর্থে, আন্তর্জাতিক সংখ্যাগরিষ্ঠের পাশে রয়েছি।’
বিয়েট্রিস মেসা হলেন মরক্কোর রাবাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক। আটলান্টিক মহাসাগর থেকে পুবে হর্ন অফ আফ্রিকা পর্যন্ত সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা, যাকে বলা হয় সাহেল, তার ওপর তিনি একজন বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, ‘সাহেল এখন নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার এক পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছে। শীতল যুদ্ধের এক নতুন মঞ্চে পরিণত হয়েছে।’
এই অঞ্চলটি আফ্রিকার অন্যতম এক অস্থিতিশীল এলাকা, বিভিন্ন সশস্ত্র জিহাদি গোষ্ঠী, বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং অপরাধী গোষ্ঠীর হাতে এলাকাটি বিপর্যস্ত এবং অভ্যুত্থান, দুর্নীতি ও কুশাসনের আবর্তে এই অঞ্চলটি আটকা পড়ে আছে।