গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলা বন্ধে লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজে হামলার নামে বিভিন্ন দেশের জাহাজে হামলা ও আটক করছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। এতে এ পথে জাহাজ চলাচলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বের পাঁচটি বড় কনটেইনারবাহী জাহাজের মধ্যে চারটিই লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। সুয়েজ খাল থেকে যে জাহাজগুলো আসে, সেগুলোকে এই পথেই চলতে হয়।
এর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ববাণিজ্যে। বিশ্বের তেল ও জ্বালানি সরবরাহে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট লোহিত সাগর।
সর্বশেষ বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিপিং গ্রুপ মেডিটেরিয়ান শিপিং কম্পানি (এমএসসি) ঘোষণা দিয়েছে তারা লোহিত সাগর রুটে জাহাজ চলাচল করবে না। এর আগেই ১৫ ডিসেম্বর জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয় ড্যানিশ শিপিং জায়ান্ট মায়ার্সক ও জার্মানির হ্যাপাগ-লয়েড।
একইভাবে ফরাসি শিপিং কম্পানি সিএমএ সিজিএমও এই রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ করেছে।
ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, হুতিরা আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে হামলা চালাচ্ছে। এ হামলায় বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্যপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা মধ্যপ্রাচ্যে নৌ তৎপরতা বৃদ্ধি করছে। এমনকি বাণিজ্যপথ বিপদমুক্ত করতে তারা হুতি বিদ্রোহীদের ওপর হামলাও করতে পারে।
আফ্রিকা ও আরব উপদ্বীপের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা বাব-এল-মান্দেব প্রণালিতে বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ ও কনটেইনার ট্রাফিকের ৩০ শতাংশ পরিবাহিত হয়। কিন্তু সম্প্রতি বিদ্রোহীদের আক্রমণের কারণে এই পথ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। দৃশ্যত গাজার সমর্থনে হুতি বিদ্রোহীরা এই আক্রমণ চালাচ্ছে, সম্প্রতি যা অনেকটাই বেড়েছে।
হুতিদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়া প্যালাটিয়াম-৩-এর মালিকানা প্রতিষ্ঠান এমএসসি নিরাপত্তার কারণে তাদের জাহাজ চলাচলের পথ সুয়েজ খাল থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এখন তারা আফ্রিকা ঘুরে উত্তমাশা অন্তরীপ দিয়ে জাহাজ চালাচ্ছে।
বস্তুত বৈশ্বিক কনটেইনার জাহাজ পরিবহনের ৫৩ শতাংশ এই চারটি কম্পানির হাতে। এখন তারা যদি এই সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ছোট ছোট জাহাজ কম্পানিগুলো ভয়ে তাদের পথ অনুসরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুয়েজ খাল দিয়ে জাহাজ পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে জাহাজ পরিবহনের সময় ও খরচ দুটিই বাড়বে; সেই সঙ্গে পণ্য সরবরাহে সংকট তৈরি হবে। ২০২১ সালে তাইওয়ান পরিচালিত এভারগিভেন জাহাজ সুয়েজ খালে ছয় দিন আটকে থাকায় বৈশ্বিক সরবরাহ সংকট ঘনীভূত হয়েছিল। এরপর লোহিত সাগরের সংকট কাছের আরব সাগরে সঞ্চালিত হলে আরেক বিপদ। বিশ্বের সয়াবিন তেলের এক-তৃতীয়াংশ এই পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। এসব ঝুঁকির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী হবে। তবে হুতিদের হুমকি জটিল ও সবাইকে সন্ত্রস্ত করার মতো হয়ে উঠছে। হুতিরা ইসরায়েলের ধ্বংস চায়।
তারা বলছে, গাজায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ না করা পর্যন্ত ইসরায়েলের বন্দরগামী জাহাজে আক্রমণ করা হচ্ছে। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত যেসব জাহাজে হামলা করেছে, তার কোনোটি ইসরায়েলগামী ছিল না বা সেগুলোর মালিকানা ইসরায়েলের হাতে ছিল না, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাহাজ হুতিদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেসব জাহাজে তারা হামলা করেছে, তার একটি ছিল হংকংয়ের পতাকাবাহী। হুতিদের এসব তৎপরতা অব্যাহত থাকলে বৈশ্বিক বাণিজ্যপথে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সূত্র : বিবিসি, দি ইকোনমিস্ট