শীতের সময় গলার সমস্যা ও করণীয়
ফ্যারিনজাইটিস বা গলাব্যথা, খুসখুসে কাশি
শীত মৌসুমে গলাব্যথা, জ্বর বা খুসখুসে কাশির সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। একে ফ্যারিনজাইটিস বলে। এ সময় সকালে ঘুম থেকে ওঠে অনেকে হঠাৎ কথা বলতে পারেন না; গলাব্যথা ও ঢোক গিলতে অসুবিধাসহ বিরক্তিকর এক অনুভূতিতে ভুগেন। ভাইরাসজনিত কারণে এ সমস্যা হয়। শীতকালে পিপাসা খুব কম লাগে। পর্যাপ্ত পানি না পান করলে পরদিন ঘুম থেকে ওঠার পর গলা শুকিয়ে গিয়েও ব্যথা হতে পারে। ফ্যারিনজাইটিস থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হলো ঠান্ডা পরিহার করে চলা। সঠিক পরিচ্ছন্নতা বজায়, নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস এবং মুখ থেকে হাত দূরে রাখুন। হালকা গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করুন। গলাব্যথা উপশমে চিনি-দুধ ছাড়া চা কার্যকর। আদা, আদার রস, লবঙ্গ, মধুও আরামদায়ক। ঠান্ডা পানি একদম পান করবেন না। ফ্যারিনজাইটিসে গরম স্যুপ, গরম পানির সঙ্গে লেবু বা মধু মিশিয়ে খেলে আরাম পাওয়া যায়। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট এবং ক্ষত নিরাময়ে মধুর সুখ্যাতি রয়েছে। গলার সঙ্গে নাক ও কানের একটা সম্পর্ক আছে। ঠান্ডা থেকে গলাব্যথা হলে নাক ও কানেও ব্যথা হতে পারে। এ জন্য গলাব্যথা ১-২ দিনের ভেতর না সারলে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ নিতে হবে।
কণ্ঠস্বর বসে যাওয়া ও গলা ভেঙে যাওয়া
ভোকাল কর্ড বা কণ্ঠনালি শীতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। নাকের নাসারন্ধ্র থেকে শুরু করে একেবারে ফুসফুস পর্যন্ত একই ঝিল্লি থাকে। এর যে কোনো জায়গায় কোল্ড অ্যালার্জি হলে এটি সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেও কণ্ঠস্বর বসে যেতে পারে। শীতকালে গলাকে ভিজিয়ে দেয়ার কাজটা কম হলেই গলা ভেঙে যায়। শীতকালে ধুলো ময়লা বেড়ে গেলে দূষণের পরিমাণ পরিবেশে বাড়ে। এর ফলে সাইনাস এবং নাকের সংক্রমণ বেশি হয়; এখান থেকে গলাতেও সংক্রমণ হয়। স্বরযন্ত্রীতে লুব্রিকেশন বা আর্দ্রভাব কমে গেলে এই জায়গাটা ঘষা লেগে খসখসে হয়ে যায়। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে রাতে বা ভোরে ঘরের বাইরে বের হলে কান-মাথা-গলা ঢেকে বের হওয়া উচিত। আরামদায়ক মাফলার ব্যবহার করুন। শীত কমাতে পায়ে মোজা পরাও ভালো। ঠান্ডা লেগে কণ্ঠস্বর বসে গেলে গরম পানির ভাপ উপকারী। গরম পানিতে মেনথলের দানা মিশিয়ে চোখ বন্ধ করে ভেপার বা ইনহেলেশন মুখ দিয়ে সকালে ও রাতে টেনে নিন।
শীতে বাড়ে টনসিলে ইনফেকশন
টনসিল এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি, যা আমাদের গলার ভেতরে শ্বাস ও খাদ্যনালীর মুখে অবস্থিত। শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবেই কিছু কমে যায়। বিশেষ করে শিশুদের ঠান্ডা পানি ও ঠান্ডা খাবার খাওয়া, অপর্যাপ্ত শীতের পোশাক, দুর্বল স্বাস্থ্য বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, অপুষ্টি, অ্যালার্জি জনিত সমস্যায় টনসিলে প্রদাহ বেশি দেখা দেয়। টনসিল ও এডিনয়েডের প্রদাহ ছাড়াও টনসিলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নানা জটিল রোগ হতে পারে। টনসিল ও এডিনয়েডের অসুখ অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
হ ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী
নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, সিলেট এম জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল