কারফিউ উপেক্ষা করে মঙ্গলবারও (৯ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে নেপালের জেন-জিরা। এদিন তারা কাঠমান্ডু উপত্যকা ও অন্যান্য জেলায় রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রীদের বাসভবন লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ললিতপুরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুঙের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পাউডেলের ভৈসেপাটির বাসভবনে পাথর নিক্ষেপ করা হয়। সোমবার পদত্যাগ করা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়।
এছাড়া নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংকের গভর্নর বিশ্ব পাউডেলের ভৈসেপাটিভিত্তিক বাসভবনেও বিক্ষোভকারীরা পাথর ছোড়ে। বুধানিলকণ্ঠ এলাকায় অবস্থিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নেপালি কংগ্রেসের সভাপতি শের বাহাদুর দেউবার বাড়ির দিকেও তারা ধেয়ে যায়, তবে তবে হামলার আগে তাদের থামিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়াও, সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র) এর চেয়ারপারসন ও প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা পুষ্পকমল দাহালের খুমলটার বাসভবনে পাথর নিক্ষেপ করেন বিক্ষোভকারীরা।কাঠমান্ডু পোস্টের স্থানীয় সংবাদদাতারা জানান, স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলেও, আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন জেলার মুখ্যমন্ত্রী, প্রাদেশিক মন্ত্রী ও অন্যান্য নেতাদের বাসভবনও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছর নেপালের সুপ্রিম কোর্ট দেশটিতে সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগমগুলোকে সরকারিভাবে নিবন্ধিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। হাইকোর্টের সেই নির্দেশের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকার দেশে সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমগুলোকে নিবন্ধনের জন্য গত ২৮ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল।
কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও সরকারিভাবে নিবন্ধন না করায় ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে এ নিষেধাজ্ঞা।
এদিকে, সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ করে দেশটির স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থী এবং তরুণ প্রজন্মকে। জেন জি নামে পরিচিত এই তরুণ প্রজন্ম গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকেই সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
অবশেষে গতকাল রোববার থেকে শুরু হয় আন্দোলন এবং আজ সোমবার তা রীতিমতো উত্তাল হয়ে ওঠে। রাজধানী কাঠমান্ডুতে কারফিউ অমান্য করে বিক্ষোভে নেমেছেন শিক্ষার্থী-জনতা। শুরুর দিকে এই বিক্ষোভে শীর্ষ দাবি হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি এলেও গতকাল এটি প্রায় পুরোপুরি সরকারবিরোধী আন্দোলনে মোড় নেয়। কাঠমান্ডুর বাণেশ্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে এ পর্যন্ত ১৯ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।