জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নিয়ে আয়োজিত উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে প্রথমবারের মতো কাতার, সৌদি আরব ও মিসরসহ ১৭টি দেশ একযোগে হামাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগে আয়োজিত সম্মেলনে এক যৌথ বিবৃতিতে হামাসকে গাজা শাসন থেকে সরে দাঁড়াতে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র হস্তান্তর করতে বলেছে। এই অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডাসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র এতে সই করেনি।
সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয় ঘোষণায়। হামাসকে ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি শাসন কাঠামো থেকে বাদ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। এতে কাতার, সৌদি আরব, মিসর, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডাসহ ১৭টি দেশ সই করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধের পর হামাসকে গাজা শাসন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে এবং অস্ত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সহায়তা থাকবে এবং লক্ষ্য থাকবে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।’ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারো একে ‘ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন’ ঘোষণা বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রথমবার আরব দেশগুলো হামাসকে প্রত্যাখ্যান করল, নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানাল এবং ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা প্রকাশ করল।’
জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘হামাস যেন ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ হামলার জন্য কোনোভাবে পুরস্কৃত না হয়। তাদের জিম্মি মুক্তি, যুদ্ধবিরতি, গাজা শাসন থেকে সরে দাঁড়ানো এবং নিরস্ত্রীকরণে সম্মত হতে হবে।’ এর আগে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানিয়েছিলেন, ইসরায়েল যদি গাজার মানবিক সংকটের অবসান না ঘটায়, তাহলে যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।বিবৃতিতে জিম্মিদের মুক্তি, সহিংসতা বন্ধ, দখলদারিত্বের অবসান এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ তৈরি করার কথা বলা হয়। যুদ্ধোত্তর গাজায় একটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শান্তিরক্ষী মিশন মোতায়েনের প্রস্তাবও রাখা হয়।
এদিকে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের এই সম্মেলনে অংশ নেয়নি এবং যৌথ ঘোষণায় সইও করেনি। তবে জানা গেছে, হামাস কিছু শর্তে অস্ত্র ত্যাগের বিষয়ে ভাবছে বলে সৌদি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে সংগঠনটির একাধিক সূত্র। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন ঘোষণা দিয়েছেন, ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। যদিও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দূরে অবস্থান করছে।’