বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে চাপ ক্রমেই বাড়ছে। এই চাপের মধ্যে এবার আন্দোলনে নামলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল সোমবার তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এর আগে থেকেই সরকারি চাকরিজীবীরা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন।
সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে সরকারের একটি নতুন অধ্যাদেশ ঘিরে। গত রবিবার সরকার যে অধ্যাদেশ জারি করে, তাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছাড়াই কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তকে ‘দমনমূলক’ আখ্যা দিয়ে তিন দিন ধরে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা। তাঁদের দাবি, এই অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
শুধু প্রশাসনিক ক্ষেত্রেই নয়, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষাঙ্গনেও। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে হাজার হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সোমবার থেকে কর্মবিরতিতে গিয়েছেন।
এই বিক্ষোভের মধ্যেই সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে এনবিআর কর্মীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে রবিবার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। ফলে আপাতত এই আন্দোলন স্থগিত রয়েছে।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া প্রাণঘাতী আন্দোলনের জেরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়লে ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন সরকার।
কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মহলের চাপের মুখে পড়েছে এই সরকার। সরকারপক্ষকে চাপে রেখেছে রাজনীতিক, আমলা, শিক্ষক থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী পর্যন্ত।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়, যখন এক ছাত্রনেতা বলেন—সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য না হলে ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন। তবে এই বক্তব্য খারিজ করে দেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ শেষ না করে কোথাও যাচ্ছি না।’ তাঁর ভাষায়, ড. ইউনূস সংকটের বাস্তবতা অনুধাবন করছেন, তবে তিনি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে অটল রয়েছেন।
বর্তমান সরকারকে সামনে রেখে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—আগে নির্বাচন হবে, নাকি আগে কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক সংস্কার? ইউনূস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের চিন্তা রয়েছে সরকারের। কিন্তু বিএনপি চাইছে ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট হোক। বিএনপির নেতৃত্বে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
এই দাবির সুরে সুর মিলিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি সম্প্রতি এক ভাষণে ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান এবং চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এই উত্তেজনার মধ্যেই গত শনিবার জরুরি বৈঠক ডাকেন ইউনূস। উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি তিনি বৈঠক করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি এবং ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির নেতাদের সঙ্গে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরদিন রবিবার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো সময় পার করছি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর আমাদের অস্থির করতে নানা চেষ্টার মুখে পড়েছি। এখান থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।’
উল্লেখ্য, চলতি মাসেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। এর ফলে দলটি পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।