পরকালে বিশ্বাসী না হলে ঈমান থাকে না। মুসলিম হতে হলে অবশ্যই কেয়ামত, হিসাব-নিকাশ-মিজান, জান্নাত-জাহান্নামের ব্যাপারে বিশ্বাস রাখতে হবে। (সুরা মুমিনুন: ১৫-১৬; সুরা ইনশিকাক: ৭-১২; সুরা আলে ইমরান: ১৩৩; সুরা হুদ: ১০৬) মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষ জানবে আখেরাত সত্য, কিন্তু তখন জেনে আর লাভ হবে না। তাই বেঁচে থাকতেই পরকালের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। যারা পরকাল নিয়ে তর্ক করে তাদের অবগতির জন্য সুরা নাবায় আল্লাহ তাআলা বলছেন—
১. عَمَّ يَتَساءَلُونَ
তারা একে অপরের কাছে কী বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে?
২. عَنِ النَّبَإِ الْعَظِيمِ
সেই মহাসংবাদ বিষয়ে
৩. الَّذِي هُمْ فِيهِ مُخْتَلِفُونَ
যে বিষয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য আছে।
৪. كَلاّ سَيَعْلَمُونَ
কখনও না, এদের ধারণা অবাস্তব, এরা শীঘ্রই জানতে পারবে;
৫. ثُمَّ كَلاّ سَيَعْلَمُونَ
আবার বলছি- কখনও না, এরা অচিরেই জানবে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: কেয়ামতের দিনটি কেমন হবে
৬. أَلَمْ نَجْعَلِ الْأَرْضَ مِهاداً
আমি কি ভূমিকে শয্যা করিনি?
৭. وَالْجِبالَ أَوْتاداً
ও পর্বতসমূহকে পেরেক?
৮. وَخَلَقْناكُمْ أَزْواجاً
আমি সৃষ্টি করেছি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায়,
৯. وَجَعَلْنا نَوْمَكُمْ سُباتاً
তোমাদের নিদ্রাকে করেছি বিশ্রাম,
১০. وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِباساً
রাত্রিকে করেছি আবরণ,
আরও পড়ুন: কেয়ামতের দিন নবীজি কোথায় অবস্থান করবেন?
১১. وَجَعَلْنَا النَّهارَ مَعاشاً
এবং করেছি দিবসকে জীবিকা আহরণের সময়,
১২. وَبَنَيْنا فَوْقَكُمْ سَبْعاً شِداداً
আর আমি নির্মাণ করেছি তোমাদের ঊর্ধ্বদেশে সুস্থিত সপ্ত আকাশ
১৩. وَجَعَلْنا سِراجاً وَهّاجاً
এবং সৃষ্টি করেছি প্রোজ্জ্বল দীপ।
১৪ وَأَنْزَلْنا مِنَ الْمُعْصِراتِ ماءً ثَجّاجاً
এবং বর্ষণ করেছি মেঘমালা হতে প্রচুর বারি,
১৫. لِنُخْرِجَ بِهِ حَبًّا وَنَباتاً
যাতে তা দিয়ে আমি উৎপন্ন করি শস্য, উদ্ভিদ,
১৬. وَّجَنّٰتٍ اَلۡفَافًا
ও ঘন সন্নিবিষ্ট উদ্যান।
১৭. اِنَّ یَوۡمَ الۡفَصۡلِ کَانَ مِیۡقَاتًا
নিশ্চয় ফয়সালার দিন নির্ধারিত আছে;
আরও পড়ুন: কেয়ামতের বড় ও ছোট আলামতগুলো জেনে নিন
১৮. یَّوۡمَ یُنۡفَخُ فِی الصُّوۡرِ فَتَاۡتُوۡنَ اَفۡوَاجًا
সেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে তখন তোমরা দলে দলে আসবে।
১৯. وَّ فُتِحَتِ السَّمَآءُ فَکَانَتۡ اَبۡوَابًا
আর আকাশ উন্মুক্ত করা হবে, ফলে তা হবে বহু দ্বারবিশিষ্ট।
২০. وَّ سُیِّرَتِ الۡجِبَالُ فَکَانَتۡ سَرَابًا
আর চলমান করা হবে পর্বতসমূহকে, ফলে সেগুলো হয়ে যাবে মরীচিকা।
২১. اِنَّ جَهَنَّمَ کَانَتۡ مِرۡصَادًا
নিশ্চয় জাহান্নাম ওঁত পেতে অপেক্ষমাণ;
২২. لِّلطَّاغِیۡنَ مَاٰبًا
সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তনস্থল।
২৩. لّٰبِثِیۡنَ فِیۡهَاۤ اَحۡقَابًا
সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে।
২৪. لَا یَذُوۡقُوۡنَ فِیۡهَا بَرۡدًا وَّ لَا شَرَابًا
সেখানে তারা আস্বাদন করবে না শীতলতা, না কোনো পানীয়।
আরও পড়ুন: কেয়ামতের দিনের গরম কতটা ভয়াবহ হবে?
২৫. اِلَّا حَمِیۡمًا وَّ غَسَّاقًا
ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া;
২৬. جَزَآءً وِّفَاقًا
এটাই উপযুক্ত প্রতিফল।
২৭. اِنَّهُمۡ کَانُوۡا لَا یَرۡجُوۡنَ حِسَابًا
নিশ্চয় তারা কখনো হিসেবের আশা করত না,
২৮. وَّ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا کِذَّابًا
আর তারা আমাদের নিদর্শনাবলীতে কঠোরভাবে মিথ্যারোপ করেছিল।
২৯. وَ کُلَّ شَیۡءٍ اَحۡصَیۡنٰهُ کِتٰبًا
আর সবকিছুই আমরা সংরক্ষণ করেছি লিখিতভাবে।
৩০. فَذُوۡقُوۡا فَلَنۡ نَّزِیۡدَکُمۡ اِلَّا عَذَابًا
অতঃপর তোমরা আস্বাদ গ্রহণ কর, আমরা তো তোমাদের শাস্তিই শুধু বৃদ্ধি করব।
৩১. اِنَّ لِلۡمُتَّقِیۡنَ مَفَازًا
নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য আছে সাফল্য,
৩২. حَدَآئِقَ وَ اَعۡنَابًا
উদ্যানসমূহ, আঙ্গুরসমূহ,
আরও পড়ুন: হাশরের মাঠ দেখতে কেমন হবে
৩৩. وَّکَوَاعِبَ اَتۡرَابًا
এবং উদ্ভিন্ন-যৌবনা সমবয়স্কা তরুণীগণ।
৩৪. وَّ کَاۡسًا دِهَاقًا
এবং পরিপূর্ণ পানপাত্র।
৩৫. لَا یَسۡمَعُوۡنَ فِیۡهَا لَغۡوًا وَّ لَا کِذّٰبًا
সেখানে তারা শুনবে না কোন অসার ও মিথ্যা বাক্য।
৩৬. جَزَآءً مِّنۡ رَّبِّکَ عَطَآءً حِسَابًا
আপনার রবের পক্ষ থেকে পুরস্কার, যথোচিত দানস্বরূপ,
৩৭. رَّبِّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ مَا بَیۡنَهُمَا الرَّحۡمٰنِ لَا یَمۡلِکُوۡنَ مِنۡهُ خِطَابًا
যিনি আসমানসমূহ, জমিন ও এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর রব, দয়াময়; তার কাছে আবেদন-নিবেদনের শক্তি তাদের থাকবে না।
৩৮. یَوۡمَ یَقُوۡمُ الرُّوۡحُ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ صَفًّا ؕ٭ۙ لَّا یَتَکَلَّمُوۡنَ اِلَّا مَنۡ اَذِنَ لَهُ الرَّحۡمٰنُ وَ قَالَ صَوَابًا
সেদিন রুহ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে, সেদিন কেউ কথা বলবে না, তবে ‘রহমান’ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া এবং সে সঠিক কথা বলবে।
৩৯. ذٰلِکَ الۡیَوۡمُ الۡحَقُّ ۚ فَمَنۡ شَآءَ اتَّخَذَ اِلٰی رَبِّهٖ مَاٰبًا
এ দিনটি সত্য; অতএব যার ইচ্ছে সে তার রবের নিকট আশ্রয় গ্ৰহণ করুক।
৪০. اِنَّاۤ اَنۡذَرۡنٰکُمۡ عَذَابًا قَرِیۡبًا ۬ۚۖ یَّوۡمَ یَنۡظُرُ الۡمَرۡءُ مَا قَدَّمَتۡ یَدٰهُ وَ یَقُوۡلُ الۡکٰفِرُ یٰلَیۡتَنِیۡ کُنۡتُ تُرٰبًا
নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; যেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম দেখতে পাবে এবং কাফির বলবে, হায়! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম!
সুরা নাবা কোরআনের ৭৮তম সুরা। এর আয়াত সংখ্যা ৪০টি, রুকু ২টি। সুরা নাবা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। নাবা শব্দের মূল অর্থ সংবাদ, এখানে কেয়ামতের ও আখেরাতের সংবাদ বোঝানো হয়েছে। কেয়ামত ও আখেরাতের সংবাদই এ সুরার মূল আলোচ্যবিষয়।