একটা সময় দুই দলের লড়াইয়ে ভারতের মেয়েদের খেলা দেখলে মনে হতো, বাংলাদেশের মেয়েরা কবে এমন ফুটবল খেলবে? আদৌ কখনো ছুঁতে পারবে ভারতকে? বাংলাদেশ এই প্রশ্নটার উত্তর মেলানো শুরু করে জুনিয়র পর্যায় থেকে। যেখানে দুই দলের ব্যবধান খুব একটা থাকে না। সিনিয়ররা যখন হাবুডুবু খাচ্ছে, তখন ভারত, নেপালের ওই জুনিয়র দলগুলোকে নিয়ম করে হারাতে শুরু করে মেয়েরা।
প্রতিবেশী এই দুই দেশ মেয়েদের ফুটবলে লাল-সবুজের এই উত্থান নিশ্চিতভাবেই উপলব্ধি করছিল।
কিন্তু মারিয়া, মনিকা, ঋতুপর্ণাদের থামানোর টোটকা যেন খুঁজে পায়নি তারা। সেই জুনিয়ররাই পরিণত হয়ে তাই পরপর দুই সিনিয়র সাফের শিরোপা জিতে নিল। প্রথমে ভারতকে একরকম বিধ্বস্ত করে। এরপর নেপালিদের চোখের সামনে তাঁদের হৃদয় ভাঙে।
এখানে বিবেচ্য শুধু ফল নয়, মাঠের ফুটবলে টেকনিক্যালি ও ট্যাকটিক্যালি শ্রেয়তর দল হিসেবেই বাংলাদেশ দুই প্রতিবেশীকে ম্লান করে দিয়েছে। তা-ও পরপর দুই আসরে। আর এটিই কি প্রমাণ করে না যে এই মেয়েরা দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে এখন নতুন উচ্চতায় উঠতে যাচ্ছে। মেয়েদের এই উত্থান ধরে রাখতে জমিনটাও কি এখন ততটা মজবুত করে তুলতে পারবে বাফুফে? গত সাফ জয়ের পরও এই প্রশ্নটা ছিল।
কিন্তু বাস্তবতা হলো- গত দুই বছরে প্রাথমিকভাবেও কোনো কাজ হয়নি। সাবিনা, মারিয়া, তহুরাদের যে সামর্থ্য তৈরি হয়েছিল, তাতেই টানা দুটি সাফ তাঁরা এনে দিয়েছেন। নিশ্চিতভাবেই সামনের দিনগুলোতে উঠতি ফুটবলারদের এমনই পরিণত হওয়ার পথটা মসৃণ হতে হবে। গত সাফ জয়ের পরপরই দেখা গেল মেয়েদের টুর্নামেন্ট খেলার জন্যই অর্থের সংস্থান নেই বাফুফের। অলিম্পিক বাছাই পর্ব তাই বাদ দিতে হলো।
গত বছর কোনো লিগই হলো না। এবারের সাফের আগেও আন্তর্জাতিক সূচিগুলো পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি। সাফের পর স্বাভাবিকভাবেই এশিয়ান আসরগুলোতে এখন ভালো করার ক্ষুধা থাকবে ঋতুপর্ণা, তহুরাদের। কিন্তু যেভাবে এত দিন চলেছে সেভাবে যে তা সম্ভব নয়, সেটি মানেন বাফুফের নবনির্বাচিত সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসানও, ‘স্বাভাবিকভাবেই মেয়েদের নিয়ে লক্ষ্যমাত্রাটা এখন ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। সাফে ভালো করেছে, এখন এশিয়ান আসরগুলোতেও যেন পাল্লা দিয়ে খেলতে পারে, সেই লক্ষ্য থাকবে। সে জন্য অবশ্যই আমাদের নতুন করে পরিকল্পনা নিতে হবে। গত সাফের পর যেটা আসলে হয়নি। তাঁদের ওপর যে পরিমাণ নজর দেওয়া উচিত ছিল, সেটা আমরা দিতে পারিনি।’
মেয়েদের খেলার মান বাড়ানো একটা প্রসঙ্গ। অন্য আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তাঁদের আর্থিক বা ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তা। সাফজয়ী এই মেয়েদেরই গত দুই মাসের বেতন বকেয়া। জীবন গোছাতে প্রথম সাফ জয়ের পরই ফুটবলকে বিদায় দিয়ে সংসারী হয়েছেন স্ট্রাইকার সিরাত জাহান, বিদেশে পাড়ি জমান নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। বসুন্ধরা কিংস বাদে লিগে অন্য যে দলগুলো আছে, দেখা গেছে তারা নামমাত্র পারিশ্রমিকে খেলাচ্ছে মেয়েদের।
ইমরুল হাসানের ভাবনায়ও তাই নারী লিগটাকে জমজমাট করে তোলার বিষয়টি, ‘বলতে পারেন সামনের দিনগুলোতে আমাদের মূল মনোযোগ থাকবে মেয়েদের লিগে। লিগটা যেন জমজমাট হয়, ফুটবলের সব ক্লাব তাতে অংশ নেয় এবং তা যেন নিয়মিত হয়। তাহলে ফুটবলার হিসেবে মেয়েদের ক্যারিয়ারটা আরো সমৃদ্ধ হবে।’ ভারত, এমনকি ভুটানও মেয়েদের লিগটাকে পেশাদার করে তুলেছে। ফলে এএফসি ক্লাব টুর্নামেন্টগুলোও খেলছে তারা নিয়মিত। সেখানে সাফ চ্যাম্পিয়নদেরই কিনা সেই দরজা বন্ধ।
গতকালের উচ্ছ্বাস-আনন্দ শেষে মেয়েদের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সেই আসল লড়াইটাই শুরু তাই আজ থেকে।