প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ সরাসরি আঘাত না হানলেও এর প্রভাব ছিল উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর প্রভাবে সৃষ্ট ঝোড়ো হাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার গাছের ডাল ভেঙে বরগুনায় এক কৃষক ও বাতাসের ধাক্কায় পানিতে পড়ে কক্সবাজারে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের উপকূলীয় ১৪ জেলায় দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেতও বহাল রেখেছে অধিদপ্তর। দানার প্রভাব থাকছে উপকূলে শিশুসহ দুজনের মৃত্যুআবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আব্দুর রহমান খান গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ এবং এর মাঝের অঞ্চলগুলোতে। বাংলাদেশে আসলে সেভাবে বড় ঝুঁকির কিছু নেই।’ তিনি বলেন, সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র যেদিক দিয়ে যায় তার ডান পাশে জলোচ্ছ্বাস হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির সামনের অংশের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং আশপাশের দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল। দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে বৃষ্টির আভাস : ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে গতকাল প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টি হয়েছে। আজও এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে আগামীকাল শনিবার থেকে অনেকটাই কমে যেতে পারে বৃষ্টি। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়, ৯৮ মিলিমিটার। ঢাকায় এ সময় ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। পাঁচ বিভাগের জন্য ভারি বর্ষণের সতর্কতা : দানার প্রভাবে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও আজ শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটার বা বেশি) বৃষ্টি হতে পারে। শিশুসহ দুজনের মৃত্যু, উপকূলে শঙ্কা ও প্রস্তুতি : ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সৃষ্ট ঝোড়ো হাওয়ায় দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা।
বেতাগী (বরগুনা) : গাছ চাপা পড়ে বরগুনার বেতাগীতে কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া কৃষক আশরাফ আলী উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিসমত করুনা গ্রামের মৃত জোনাব আলী হাওলাদারের ছেলে। গতকাল সকালে ছোট মোকামিয়া বাজারে যাওয়ার পথে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে রাস্তার পাশের চাম্বলগাছ উপড়ে চাপা পড়েন তিনি। চকরিয়া (কক্সবাজার) : চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের চৌয়ারফাঁড়ি এলাকায় বুধবার রাতে দুই বছরের এক শিশু মারা যায়। আদিবা জান্নাত নামের ওই শিশুটি চৌয়ারফাঁড়ি এলাকার ইজি বাইকচালক বোরহান উদ্দিনের মেয়ে। সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা উপকূলের অন্তত ৯টি পয়েন্টে ছয় কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সামান্য জলোচ্ছ্বাসে এসব পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে দুই উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। ভোলা : গত দুই দিন ধরেই ভোলা জেলাজুড়ে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের খবরে মনপুরার ৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকায় উত্কণ্ঠায় রয়েছে ওই উপজেলার লক্ষাধিক বাসিন্দা। কক্সবাজার : কক্সবাজারের ইনানী সৈকতের নৌবাহিনীর জেটি ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে জোয়ারের পানির তোড়ে একটি ছোট বার্জের ধাক্কায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। জেটি ভেঙে যাওয়ায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণেও দেখা দিয়েছে বিপত্তি। ঝালকাঠি : সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৬ নম্বর সতর্কসংকেত বহাল রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। নদীতীরের মানুষের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রামপাল (বাগেরহাট) : উপকূলীয় উপজেলা রামপালে গতকাল সকাল থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ১৭৩টি আশ্রয়শিবির প্রস্তুত রেখেছে। বাগেরহাট : বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। নদীপারের মানুষের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাগেরহাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাত কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জেলায় ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতি নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতা কোথায়?অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার শপথ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের পদচ্যুতির দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর রাষ্ট্রপ্রধানকে সরানোর উদ্যোগ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, বিশ্লেষণ। এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ কিংবা অপসারণের ক্ষেত্রে কিছু সাংবিধানিক জটিলতা সামনে এসেছে। আচমকা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিরোধিতা করে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে এতে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারনের দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় ছাত্ররা। ছাত্রজনতার দাবির পর সরকার রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির বিষয়টিকে গণদাবি হিসেবেই সামনে এনে সুরাহার উদ্যোগ নিয়েছে।বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির বিষয়টি উঠেছে এবং রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করবেন স্পিকারের নিকট। আর তাকে অপসারণ করতে পারে নির্বাচিত সংসদ। এখন সংসদ বিলুপ্ত আবার স্পিকারও পদত্যাগ করেছেন। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দেশে রাজনৈতিক সংকট এবং সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি করবে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।