এক বছরে দুইবার পরীক্ষামূলক তেল খালাসের পাশাপাশি কমিশনিংয়ের পরও ঠিকাদার নিয়োগে জটিলতায় চালু করা যাচ্ছে না সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম)। আট হাজার কোটি টাকার যন্ত্র গভীর সাগরে অলস পড়ে থাকায় লাইটারেজ জাহাজে তেল আনা বাবদ প্রতিমাসে বাড়তি খরচ ৬৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে চার দিনের ব্যবধানে আগুনে পুড়েছে তেলবাহী রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি অয়েল ট্যাংকার।
বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী উপকূল থেকে অন্তত ১৬ নটিক্যাল মাইল গভীরে স্থাপন করা হয়েছে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং। বড় আকারের অয়েল ট্যাংকারগুলো এখানে তেল খালাস করবে। এরপর ভাসমান এসপিএম থেকে পাইপের মাধ্যমে আমদানি করা ক্রুড অয়েল চলে যাবে মহেশখালীর মাতারবাড়ির রিজার্ভারে। সেখান থেকে তেল পাঠানো হবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে।
বাংলাদেশে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি জ্বালানি তেলের প্রয়োজন আছে। সেসব তেল আসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। গভীর সমুদ্র বা চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এসব ট্যাংকার অবস্থান নেয়ার পর লাইটার জাহাজ দিয়ে সেসব তেল নেয়া হয় বিভিন্ন নদী বন্দর ও উপকূলে। এর ফলে সময় লাগে অন্তত ৩০ দিন। তবে নতুন এ পদ্ধতিতে সময় কমে লাগবে মাত্র দুদিন।
৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গভীর সাগরে তেল খালাসের এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালে। ওই বছরই কমিশনিংয়ের পাশাপাশি একবার পরীক্ষামূলক তেল খালাস করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষবারের মতো করা হয় পরীক্ষামূলক তেল খালাস। অথচ এখনও গভীর সাগর থেকে লাইটারেজের মাধ্যমে উপকূলে তেল আনছে পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। আধুনিক পদ্ধতি থাকা সত্ত্বেও প্রতি মাসে ৬৬ কোটি টাকার হিসাবে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, ‘যেসব কনস্ট্রাকশন ফার্মকে টাইম লিমিটস দেয়া হয়েছে, তাদেরকে এ ড্যামারেজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। ওরা ঠিক সময়ে কাজ শেষ করেনি নাকি আমাদেরও আন্তরিকতা কম ছিল, সেটারও একটা মূল্যায়ন দরকার।’
প্রতিবছর ১২ থেকে ১৪ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল খালাস করছে শিপিং করপোরেশন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ও ৫ অক্টোবর আলাদা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেলবাহী রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি অয়েল ট্যাংকার। অগ্নিকাণ্ডের পর আলোচনায় আসে এসপিএম এর মাধ্যমে তেল খালাস না হওয়ার বিষয়টি।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘এসপিএম এর মাধ্যমে তেল খালাস কার্যক্রম চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা জাতীয়ভাবে দায়বদ্ধ। ফলে লাইটারেজের মাধ্যমে এ কার্যক্রম আমাদের চালাতে হবে।’
পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তথ্যমতে, চলতি বছর ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হলে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে জুনের মধ্যে এসপিএমের মাধ্যমে তেল খালাস সম্ভব। প্রকল্পের আওতায় গড়ে তোলা রিজার্ভারে অন্তত ২ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল রাখা যাবে। যা বাংলাদেশের দুই মাসের বাড়তি মজুত।