টানা ৩২ বছর ধরে ইরান সমর্থিত লেবানন ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব দিয়েছেন হাসান নাসরাল্লাহ। হিজবুল্লাহকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত করার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তার। দখলকৃত লেবাননি ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের তাড়াতে প্রথমে একটি মিলিশিয়া দল হিসেবে গড়ে উঠেছিল হিজবুল্লাহ। পরে এ দলকেই লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এক বাহিনীতে রূপ দেন নাসরাল্লাহ।
তবে গত শুক্রবার লেবাননের বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন তিনি।নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলটির নতুন প্রধান কে হচ্ছেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, হিজবুল্লাহর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হাশেম সাফিউদ্দিন দলটির নতুন প্রধান হতে যাচ্ছেন।
এছাড়া বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং আল জাজিরার প্রতিবেদনেও জানানো হয়েছে যে, সশস্ত্র এ গোষ্ঠীর পরবর্তী প্রধানের দায়িত্ব নিতে পারেন হাশেম সাফিউদ্দিন। হিজবুল্লাহর একটি সূত্রও জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া হাশেম সাফিউদ্দীনকে নতুন সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দেখা যেতে পারে।হাশেম সাফিউদ্দিন হিজবুল্লাহর নির্বাহী কাউন্সিলের প্রধান এবং গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক বিষয়গুলো তত্ত্বাবধান করেন। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এই গোষ্ঠীর সামরিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী জিহাদ কাউন্সিলের সদস্যও তিনি।হিজবুল্লাহতে তার এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তাকে বিদেশী প্রতিপক্ষের শত্রুতে পরিণত করেছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরব সাফিউদ্দিনকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করে।
১৯৬৪ সালে টায়ারের কাছে দেইর কানুন এন-নাহরের দক্ষিণে অবস্থিত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হাশেম। প্রয়াত হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরাল্লাহর চাচাতো ভাই তিনি। ইরানের শহর নাজাফ এবং কোমে নাসরাল্লাহর সাথে একসাথে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি, হয়ে উঠেন ধর্মীয় পণ্ডিত।হাসান নাসরাল্লাহর মত তিনিও মাথায় কালো পাগড়ি পরেন। ছাড়া তিনি নিজেকে মহানবী হযরত মোহাম্মদের (সা.)-এর খুব কাছের বংশধর হিসেবেও দাবি করেন।সংগঠনের প্রাথমিক দিনগুলোতে হাসান নাসরাল্লাহ এবং হাশেম দুজনেই হিজবুল্লাহতে যোগ দিয়েছিলেন।
গত জুনে ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহর এক কমান্ডার নিহত হওয়ার পর কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন হাশেম সাফিউদ্দিন। ওই কমান্ডারের দাফন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘(শত্রুদের) কান্না ও বিলাপের জন্য প্রস্তুত হও।’প্রায়ই দেশের জনতার উদ্দেশে নানা বিবৃতি দেন হাশেম সাফিউদ্দিন। তার বক্তব্যে হিজবুল্লাহর সামরিক অবস্থান ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের বিষয়গুলো ওঠে আসে।নাসরুল্লাহর সঙ্গে হাশেম সাফিউদ্দিনের পারিবারিক সম্পর্ক ও শারীরিক সাদৃশ্য থাকায় এবং তিনিও মহানবী হযরত মোহাম্মদের (সা.) বংশধর হওয়ায় হিজবুল্লাহর হাল ধরা তার পক্ষে সহজ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে হাশেম সাফিউদ্দিন ছাড়াও ৭১ বছর বয়সী হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি এবং জেনারেল নাইম কাসেমও হিজবুল্লাহ প্রধান হওয়ার তালিকায় রয়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।কাসেম ১৯৯১ সালে তৎকালীন সেক্রেটারি-জেনারেল আব্বাস আল-মুসাভির অধীনে হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল নির্বাচিত হন। ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছিলেন আব্বাস আল মুসাভিও।কাসেম বহু বছর ধরে হিজবুল্লাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং তিনি গোষ্ঠীটির নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্যও। তিনি ২০০৫ সালে হিজবুল্লাহ, দ্য স্টোরি ফ্রম উইদিন নামে একটি বিখ্যাত বই প্রকাশ করেন, যা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছিল।