বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। মেডিকেল বোর্ডের অনুমোদন পেলে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র অথবা যুক্তরাজ্যে পাঠানো হবে, যেখানে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপন ও অন্যান্য জটিল চিকিৎসা করা হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসক এবং মেডিকেল বোর্ডের সমন্বয়ক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলির সঙ্গে আলোচনা চলছে। যুক্তরাজ্যে যাত্রায় ৮ থেকে ১৩ ঘণ্টা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ থেকে ২১ ঘণ্টা সময় লাগবে। সুতরাং, শারীরিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করে কিছুটা সময় লাগতে পারে। এই চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ সময় বিদেশে থাকার প্রয়োজন হতে পারে।
বিমানে দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য শারীরিক প্রস্তুতি না থাকায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার চেষ্টা চলছে, যা ইতোমধ্যে অনেকটা অগ্রসর হয়েছে।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. আল-মামুন জানান, বিদেশ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার প্রস্তুতি চলছে। বোর্ডের আরেক সদস্য জানান, কাতার থেকে বিমানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যভিত্তিক সুস্থতা অনুযায়ী দিন-তারিখ ঠিক করা হবে। খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস ছাড়াও অন্যান্য জটিলতা রয়েছে, তাই যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
চিকিৎসকরা জানান, লিভার প্রতিস্থাপনের আগে অন্যান্য জটিলতা কমানোর প্রয়োজন হবে। প্রথমেই লিভার প্রতিস্থাপন করা যাবে না; তাই শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। খালেদা জিয়ার বর্তমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে চিকিৎসক বলেন, তাঁর অবস্থা আগের চেয়ে উন্নত। প্রতিদিন চিকিৎসকরা ফলোআপ করছেন, বিএনপি এবং অন্যান্য দলের নেতারা নিয়মিত আসছেন। তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস স্বাভাবিক রয়েছে, এবং গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সূচকগুলি সঠিক মাত্রায় রয়েছে। বয়সজনিত কারণে মাঝে মাঝে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করছে। গত জুনে অসুস্থ হওয়ার পর খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ারের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়, যেখানে তাঁর হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়।
চিকিৎসার পর গত ২ জুলাই খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরে যান। তবে, ৮ জুলাই তাঁর রক্তচাপ এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে তাঁকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, এবং তখন থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত বছরের অক্টোবর মাসে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিসের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত জনস হপকিন্স হাসপাতালের তিন চিকিৎসক ঢাকায় এসেছিলেন।
চার বছর আগে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন সময়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। গত ছয় বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও এভারকেয়ার হাসপাতালে মোট দেড় বছরেরও বেশি সময় কাটাতে হয়েছে তাঁকে।
যদিও পরিবারের সদস্যরা গত তিন বছরে কয়েক দফা খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। তবে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরদিন খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করে সরকার।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস এবং কিডনির মতো জটিল রোগে ভুগছেন।
এদিকে, যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় পৌঁছেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনে পৌঁছান, যা বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান নিশ্চিত করেছেন।
খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকো পরিবারের সঙ্গে মালয়েশিয়ায় থাকাকালে প্রায় এক দশক আগে মারা যান। এরপর থেকে শর্মিলা রহমান ও সন্তানরা লন্ডনে বাস করছেন। সেখানে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সপরিবারে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। শর্মিলা রহমান সিঁথি সর্বশেষ ঢাকায় এসেছিলেন ২৮ জানুয়ারি, যেখানে তিনি অসুস্থ শাশুড়ির পাশে ছিলেন।