২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের দিন মাত্র ৩৬ ঘণ্টায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ড নিয়ে এই প্রথম মুখ খুলেছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মঈন উ আহমেদ। গত বৃহস্পতিবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বিডিআর বিদ্রোহের বিষয়ে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন।
মঈন উ আহমেদ বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে যখন তদন্তের আদেশ দিই, এই তদন্ত করতে সরকারের কাছ থেকে যে সাহায্য প্রয়োজন, তা আমরা পাইনি।
সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলাম চৌধুরী (বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা)। তিনি তাঁর কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারেননি। কারণ অনেকে জেলে ছিল, অনেককে প্রশ্ন করা সম্ভব হয়নি। আমার কাছে এসে বেশ কয়েকবার তাঁর সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
আমি আশা করি, তিনি এখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি এই তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করে জড়িতদের বের করতে সক্ষম হবেন।’
তিনি বলেন, ‘সেদিন সকাল ৯টায় সেই মিটিং শুরু হয়। সাড়ে ৯টার দিকে আমার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি কর্নেল ফিরোজ রুমে প্রবেশ করেন এবং আমাকে বলেন, পিলখানায় গণ্ডগোল হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু তাঁদের ফোন ব্যস্ত পাই।’
মঈন উ আহমেদ বলেন, “৯টা ৪৭ মিনিটে ডিজি বিডিআরকে ফোনে পাওয়া যায়। তিনি জানান, ‘দরবার চলাকালে দুজন সশস্ত্র সৈনিক প্রবেশ করে একজন আমার পেছনে দাঁড়ায়। এর পরই বাইরে থেকে গুলির শব্দ আসে।
সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে থাকা সৈনিকরা দরবার হল থেকে বের হয়ে যায়। এগুলো সবই মনে হয় প্ল্যান করা এবং সে অনুযায়ী চলছে।’”
সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘৯টা ৫৪ মিনিটে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই। এর মধ্যেই তিনি বিডিআর বিদ্রোহ সম্পর্কে অনেক তথ্য পেয়ে গিয়েছিলেন। এ সময় তাঁকে অপারেশনের কথা জানালে তিনি জানতে চান, কতক্ষণ সময় লাগবে এই ব্রিগেড তৈরি করতে? আমি সময় জানিয়ে ব্রিগেডকে পিলাখানায় যাওয়ার জন্য তাঁর অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দেন। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় লাগলেও ৪৬ ব্রিগেড এক ঘণ্টার মধ্যে যাত্রা শুরু করে।’
তিনি বলেন, ‘সকাল ১১টায় ৪৬ ব্রিগেডের প্রথম গাড়িটি মেইন গেটের কাছাকাছি পৌঁছালে বিদ্রোহীরা একটি পিকআপে রকেট হামলা চালায়। এতে চালক ঘটনাস্থলেই মারা যান। লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসের ধারণা অনুযায়ী, সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যেই ডিজি, ডিডিজি, কর্নেল আনিস, কর্নেল কায়সারসহ অনেক অফিসারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমাদের টিম পৌঁছে ১১টার পরে।’
সাবেক সেনাপ্রধান জানান, ক্যাপ্টেন শফিক তাঁর নেতৃত্বে ৩৫৫ জন র্যাব সদস্য নিয়ে পিলখানায় পৌঁছেন ১০টার আগেই। এ সময় তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পিলখানায় প্রবেশের অনুমতি চাইলেও তা পাননি। অনুমতি পেলে হয়তো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সুবিধা হতো এবং এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
