শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ছে। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরসহ বিভিন্ন দেশের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোতে বেড়েছে প্রবাসীদের ভিড়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পতনের আগে ও একদিন পর পর্যন্ত অর্থাৎ ১ থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৫.৬৫ মিলিয়ন ডলার। আর পতনের পর ৭ থেকে ১০ আগস্ট রেমিট্যান্স এসেছে ৩৮৭.১২ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে দুদিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটি।
সব মিলিয়ে চলতি আগস্টের প্রথম ১০ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৮২.৭৭ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, গত মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন, ইন্টারনেট ও সংঘাতের কারণে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স শাটডাউন ঘোষণা দেন। এর প্রভাবে ওই মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে। তার ধারাবাহিকতা চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেও ছিল। তবে সরকার পতনের পর রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।
তাদের মতে, শেখ হাসিনার পতনের পর বর্তমানে দেশে হুন্ডি একেবারে বন্ধ রয়েছে। টাকা পাচার, আন্ডার বা ওভার ইনভয়েসিংয়ের মতো কারসাজিমূলক বিষয়গুলো বন্ধ থাকায় বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ছে। তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যতদিন থাকবে, ততদিন হুন্ডি কম থাকবে। যেমনটি হয়েছিল কোভিডের সময়ে। এর আগে গেল জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও কোরবানি-পরবর্তী মাস হওয়ায় প্রবাসী আয় আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায়।
জুলাই মাসে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, তা ছিল গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্টে দেখা যায়, জুলাই মাসে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ১.৯১ বিলিয়ন ডলার। যদিও তার আগের মাস জুনে এসেছিল ২.৫ বিলিয়ন ডলার। গত জুলাইয়ে ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছিল। আর গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে জুলাইয়ে রেমিট্যান্স পরিমাণ ২২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ৭২৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। গত বছরের জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এর পরের ৯ মাসের পাঁচ মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে; চার মাস এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সপ্রবাহে ধীরগতি নিয়ে শুরু হয় নতুন অর্থবছর। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে রেমিট্যান্সপ্রবাহে আরও পতন দেখা দিয়েছে। যদিও আগের মাস জুনে এই সূচকে উল্লম্ফন দেখা গিয়েছিল।
গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ (২.৫৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্সপ্রবাহ পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার; টাকার হিসাবে ছিল এক হাজার কোটি টাকা। একক মাসের হিসাবে জুন মাসের রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি (২.৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। গত বছরের জুনের চেয়ে এই বছরের জুনে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি এসেছিল দেশে। কিন্তু নতুন অর্থবছরের শুরুতে রেমিট্যান্সপ্রবাহের সেই উল্লম্ফন আর নেই।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, রোববারে কিছুটা কম পেলেও সোমবারে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো ভালো পরিমাণের রেমিট্যান্স পাচ্ছে। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের এমন ধারা অব্যাহত রাখলে ডলার সংকট কেটে যাবে। ইসলামী ধারার একটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্যের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো থেকে সোমবার ভালো পরিমাণে রেমিট্যান্স আসছে।