বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগের প্রথম দিনেই গতকাল সারি সারি লাশে রক্তাক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকাসহ ১৯ জেলায় ত্রিমুখী সংঘর্ষ ও গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন পুলিশসহ ১০৪ জন। তাদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ সদস্য এবং বাকিরা আন্দোলনকারী ছাত্র, পেশাজীবী ও রাজনৈতিক কর্মী। আন্দোলনকারী, আওয়ামী লীগকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে বিক্ষোভের আগুন পৌঁছেছে শহর নগর গ্রামে। সবমিলিয়ে দেশব্যাপী তৈরি হয়েছে এক ভীতিকর পরিস্থিতি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচিতে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত অন্তত ২২২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৬৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে ২৬, ঢাকায় ১১, ফেনী ৮, লক্ষ্মীপুর ৮, নরসিংদী ৬, সিলেট ৫, বগুড়া ৫, রংপুর ৫, কিশোরগঞ্জ ৫, মাগুরা ৪, কুমিল্লা ৩, পাবনা ৩, মুন্সীগঞ্জ ৩, শেরপুর ৩, জয়পুরহাট ২, বরিশাল ১, ভোলা ১, হবিগঞ্জ ১, সাভার ১, সুনামগঞ্জ ১, কেরানীগঞ্জ ১ ও কক্সবাজারে একজন।
সবচেয়ে বেশি ২৬ জন নিহত হয়েছে সিরাজগঞ্জে। এর মধ্যে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। এছাড়াও বিভিন্নস্থানে সহিংসতা ও আগুনে ১৩ জন মারা গেছেন। সদর আসনের এমপি ড. জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে বেলা ৩টার দিকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাত ৯টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর এমপির স্বজনরা বাসায় ঢুকে দুজনের পুড়ে যাওয়া লাশ পায়। তাদের মধ্যে একজনের নাম শাহিন। তার বাড়ি শহরের জানপুর গ্রামে। তিনি ছাত্রলীগ কর্মী বলে জানা গেছে। অন্যজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন, নয়াবাজার, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, কারওয়ান বাজার, মিরপুর-১০, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তারা আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থী, পথচারী, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী। ফার্মগেটে গুলিতে আহত এক তরুণকে ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়। পরে গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় তৌহিদুল ইসলাম (২২) নামে ওই তরুণের মৃত্যু হয়। তিনি কবি নজরুল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে স্নাতকে ভর্তির অপেক্ষায় ছিলেন। পাশাপাশি ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায়। এর পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রমিজ উদ্দিন রূপ (২৪) নামে আরেক শিক্ষার্থীকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। তাকে কারওয়ান বাজার থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে জহির উদ্দিন (২৫) নামে আরেক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাকে গুলিস্তান থেকে ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জিগাতলায় গুলিতে আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩) নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তিনি হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের বিবিএর শিক্ষার্থী। তার বাসা পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারে। উত্তরায় সংঘর্ষে ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা গুলিতে মারা যান। মিরপুরে গুলিতে মিরাজ হোসেন (২২) নামে এক পরিবহন শ্রমিক নিহত হন। এ ছাড়া ঢামেকে অজ্ঞাত আরও দুজনের লাশ পাওয়া তথ্য পাওয়া গেছে। এদের একজনের বয়স আনুমানিক ২৫। গত রাত ৮টার দিকে যাত্রাবাড়ি থেকে জুয়েল (২৮) নামের এক যুবককে বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢামেকে আনা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই এলাকা থেকে রিয়াজুল (৩৫) নামের অপর এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সন্ধ্যার পর ঢামেকে আনা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সায়েন্স ল্যাবে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৪১ : রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে গতকাল বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ সায়েন্স ল্যাব থেকে জিগাতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ৪১ জন। এর মধ্যে তিনজন তাজা গুলি ও বাকিরা ছররা গুলিতে বিদ্ধ হয়েছেন। সায়েন্সল্যাবে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অবস্থান চলাকালে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস থেকে আগত নেতা-কর্মীরা তাদের উদ্দেশে ইট পাটকেল ছোড়ে। এতে মুহূর্তেই রণক্ষেত্রের রূপ নেয় পুরো ধানমন্ডি, সিটি কলেজ, বিজিবি সদর দপ্তর এলাকা ও জিগাতলা। এ সময় জিগাতলায় গুলিতে আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩) নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তিনি হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের বিবিএর শিক্ষার্থী। তার বাসা পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারে।
ধানমন্ডিতে ‘ইয়েলো’র শোরুমে আগুন : রাজধানীর ধানমন্ডি-২ নম্বরে পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘ইয়েলো’র একটি শাখায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ভবনটি। গতকাল বিকাল ৪টায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে দুপুর থেকেই ধানমন্ডির বিভিন্ন সড়কে আন্দোলনকারী, আওয়ামী লীগকর্মী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এর মধ্যেই কে বা কারা ধানমন্ডি-২ নম্বর রোডে পপুলার ডায়াগনস্টিকের পাশে ও স্টার কাবাবের বিপরীত দিকে অবস্থিত ‘ইয়েলোর’ শোরুমে আগুন দেয়।
উত্তরায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নিহত দুই, আহত অর্ধশত : রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার পর থেকে আজমপুরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে দুজন নিহতসহ অর্ধশত আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি উত্তরা ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. হাবিব হাসানের আপন চাচাতো ভাই ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল। তাকে গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারীরা। নিহত আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এর আগে, সকালে ‘এক দফা এক দাবি’ স্লোগান দিয়ে সড়কে মিছিল নিয়ে বের হন উত্তরার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা হাউস বিল্ডিং, আজমপুর থেকে বিএনএস সেন্টার পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সকাল থেকেই মাঠে ছিল আন্দোলনকারীরা। আজমপুর থেকে জসীমউদ্দিন পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আজমপুর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের একটি অংশ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। এর পর শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পিছু হটে। এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি অস্ত্র, ইট-পাটকেট ও লাঠিসোঁটা নিয়ে একে অপরের মুখোমুখি হয়। থেমে থেমে সংঘর্ষ চলতে থাকে। চলতে থাকে গুলিও। ঘটে হতাহতের ঘটনা। বেলা ১১টার দিকে উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ার এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হয়ে অবস্থান নেয়। রাজলক্ষ্মী, আজমপুর রেলগেটের গলির মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ চলাকালীন আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের গলির মধ্যে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। আমির কমপ্লেক্স এবং রাজউক মার্কেটের মাঝে প্যান্ডেল তৈরি করে সকাল থেকে অবস্থান করে সাবেক এমপি হাবিব হাসানের অনুসারী আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ। সংঘর্ষ শুরু হলে প্যান্ডেল ও চেয়ার পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। সংঘর্ষে দুজন নিহতসহ অর্ধশত আহত হন। ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল গুলিতে মারা যান। উত্তরা পূর্ব থানায় পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ও দুটি ট্রাক ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ইট-পাটকেলের হামলায় থানার তিন তলার জানালার কাচ ভেঙে গেছে। জসিমউদ্দীন, রাজলক্ষ্মী, আজমপুর, হাউজবিল্ডিং ও আবদুল্লাহপুর শিক্ষার্থীদের দখলে ছিল।
কারওয়ান বাজারে ত্রিমুখী সংঘর্ষ : কারওয়ান বাজারে বিকালে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীরা বাংলামোটরের দিকে অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। অন্যদিকে কারওয়ান বাজারের দিকে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ অংশে পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এদিকে আন্দোলনে বাংলামোটর মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়।
সংঘর্ষে রণক্ষেত্র মোহাম্মদপুর : রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডেও ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ, আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। আহতদের সবাই আন্দোলনকারী বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিকাল পৌনে ৪টায় আল্লাহ করিম জামে মসজিদের সামনে থেকে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ছররা গুলি চালায় পুলিশ। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। সকাল থেকেই আন্দোলনকারীদের দখলে ছিল মোহাম্মদপুর এলাকা। এ ছাড়া বসিলা ব্রিজ থেকে তিন রাস্তার মোড়, পরে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে দখল নেয় আন্দোলনকারীরা।
আফতাবনগর : গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় আফতাবনগরের ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ইস্ট ওয়েস্ট ছাড়াও আশপাশের আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন।
মিরপুর-১০ এ পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ : গতকাল বিকাল ৫টায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর নিয়ন্ত্রণে নেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় গুলিতে একজন নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে তিন শতাধিক। মিরপুর ১৪ ও ১২ থেকে ১০ নম্বরের দিকে যাওয়ার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। কিছু সময় পর পর ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। গুলিতে নিহত মিরাজ হোসেন (২২) আলিফ পরিবহনের বাস চালাতেন। আন্দোলন দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। থাকতেন মিরপুর ৬ নম্বরে। এর আগে সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থান নিয়ে থাকে মিরপুর গোলচত্বরে। দুপুর ১২টায় সেখানে তাদের সমাবেশ করতে দেখা যায়। তখন থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছিল। বিক্ষোভকারীদের একটি দল কাজীপাড়ার দিক থেকে, অন্য আরেকটি দল মিরপুর-১১ নম্বরের দিকে থেকে গোলচত্বরের দিকে আসার চেষ্টা করলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশ বক্সে আগুন : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছে। আন্দোলন কর্মসূচির সমর্থনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মানববন্ধন ঘিরে তৈরি হয় এই পরিস্থিতি। পুলিশ রাবার বুলেট-টিয়ার শেল ছোড়ে, পরে একটি পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল বেলা সোয়া ১২টায় শুরু হয় এই উত্তেজনা। এ সময় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর বক্তৃতা শুরু হলে হঠাৎ করে কদম ফোয়ারার দিক থেকে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। পরে আন্দোলনকারীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় প্রেস ক্লাবের সামনে রণক্ষেত্র পরিণত হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে সেগুনবাগিচার বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী স্লেøাগান দিতে থাকে।
সিএমএম ও সিজিএম আদালতের কার্যক্রম বন্ধ : গতকাল বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের প্রধান ফটক ভেঙে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে। এ সময় তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে ভাঙচুর চালায় এবং চারদিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এর কিছুক্ষণ পরেই সাময়িকভাবে এই দুই আদালতের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঢাকার সিএমএম আদালতের নাজির রেজোয়ান খন্দকার বলেন, সিএমএম আদালতের বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল বলেন, আদালতে হামলার পর বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এদিকে দুপুর ১২টায় এক দফার সমর্থনে অর্ধশতাধিক বিএনপিপন্থি আইনজীবী ঝটিকা মিছিল করেন। আইনজীবী সমিতির সামনে থেকে সিএমএম আদালতের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে তারা মিছিল নিয়ে দ্রুত আদালত চত্বর ত্যাগ করেন।
পুরান ঢাকায় পুলিশের গাড়িতে আগুন : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে রাজধানীর পুরান ঢাকার সদরঘাট, রায় সাহেব বাজার, তাঁতীবাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দফায় দফায় এই এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলে। এর আগে বেলা ১১টায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়। সদরঘাট, বাংলাবাজার, পাটুয়াটুলী, রায়সাহেব বাজার, তাঁতীবাজার ও এর আশপাশের গলি এবং প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীদেরও অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এ সময় বাংলাবাজার, ইসলামপুর, পাটুয়াটুলী, সদরঘাট এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সোয়া ১১টায় আন্দোলনকারীরা ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনের রাস্তায় পার্ক করা পুলিশের গাড়ি উল্টে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিভিন্ন স্থানে টায়ার দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। বেলা পৌনে ১২টায় আন্দোলনকারীরা রায়সাহেব বাজার পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় কয়েকবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় আদালতের সামনে পার্ক করা পুলিশের পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করেন তারা। এদিকে গতকাল বেলা ১১টায় সদরঘাটে ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল রহমান মিয়াজীর অফিসে হামলা হয়। এতে সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে জানা গেছে।
যাত্রাবাড়ী থানা ঘিরে রাখে আন্দোলনকারীরা : যাত্রাবাড়ী মোড় দখল নিয়ে থানা ঘেরাও করে রাখে আন্দোলনকারীরা। তারা মোড়ের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। গতকাল বিকাল পৌনে তিনটায় দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী মোড়ের আশপাশ দখল নিয়ে পিকেটিং করে আন্দোলনকারীরা। তাদের হাতে হাতে ছিল লাঠিসোঁটা। এ সময় মোড়ের পুলিশ বক্সে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের একটি অংশ যাত্রাবাড়ী থানার সামনে অবস্থান নিয়ে ভিতরে ঢুকার চেষ্টা করে। এদিকে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সড়ক অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। মূলত কাজলা ব্রিজ এলাকায় আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেয়। সেখানে দুপুর দুইটায় একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী সাইনবোর্ড সড়কটিও অবরোধ করে রাখে অবরোধকারীরা।
প্রগতি সরণিতে আন্দোলনকারীরা : গতকাল দুপুরের পর থেকে প্রগতি সরণিতে যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় রাস্তায় জমায়েত হয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকে আন্দোলনকারীরা। এ সময় ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সেখানে জমায়েত হয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সৈয়দ টিটুর বাসায় দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন দুজন। এক যুবলীগ নেতাকে হাত-পা বেঁধে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারী একজন স্ট্রোক করে এবং বাজিতপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন একজন।