বন্ধ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। বন্ধ আবাসিক হল। মাঝে কিছুদিন ইন্টারনেটও বন্ধ ছিল। ফলে যেসব শিক্ষার্থীকে জীবিকার তাগিদে পড়ালেখার পাশাপাশি আয় করতে হয়, তাঁদের অনেকে পড়েছেন বিপাকে। অন্য সময়ের তুলনায় এবারের সংকট আলাদা। বিশ্ববিদ্যালয় বা হল বন্ধ হলেও সাধারণত কবে খুলতে পারে, সে সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কিছুটা ধারণা থাকে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন তাঁরা। এবার সবকিছুই অনিশ্চিত। যাঁরা হলে থেকে ক্যাম্পাসের আশপাশে কোনো না কোনো খণ্ডকালীন কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের বাড়ি ফিরতে হয়েছে। অনলাইনে যাঁরা আয় করতেন, তাঁদের জীবিকাতেও লেগেছে বড় ধাক্কা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের শিক্ষার্থী নির্মল বর্মণ যেমন চারটি টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালান। কখনো কখনো পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহায়তা করেন। কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তাঁকে গ্রামে নিজের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। যে টিউশনিগুলো করতেন, সেগুলো থাকবে কি না, তিনি নিশ্চিত নন।
নির্মলের সঙ্গে এসব নিয়েই কথা হচ্ছিল। বললেন, ‘এখনকার পরিস্থিতিতে যদিও এসব নিয়ে কথা বলার সুযোগ কম। কিন্তু হুট করে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়ার ফলে টিউশনির টাকাও ঠিকমতো পাইনি। নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হয়। আপাতত জমানো টাকায় চলছে, কিন্তু এভাবে কত দিন চলতে হবে, তা-ও তো জানি না।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর সিদ্দিকী ওয়েরিক্স নামের একটি ক্রীড়াসামগ্রী বিক্রয় প্রতিষ্ঠান চালান। চলমান পরিস্থিতির কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠানের আয় কমে গেছে অনেক। তিনি বলেন, ‘ব্যবসার অবস্থা একদমই ভালো নয়। আমাদের ৭০ শতাংশ অর্ডার আসে অনলাইনে। ক্রেতাদের অধিকাংশই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিক্রি একদম শূন্যের কোঠায়। কিন্তু যে খরচগুলা প্রতি মাসে করতেই হয়, সেগুলো তো বহন করতেই হচ্ছে। ঈদের আগের একটা ক্যাম্পেইনে আমার স্টক ৯০ শতাংশ শেষ। নতুন করে প্রোডাক্ট তৈরি করতে দিয়েছি। কিন্তু দেশের অবস্থার জন্য সময়মতো হাতে পাচ্ছি না। খুব দুশ্চিন্তায় আছি। এমন অবস্থা আরও এক-দুই মাস যদি যায়, লোকসান আরও বেড়ে যাবে। তখন হয়তো নতুন কোনো উদ্যোগ নিয়ে এই লোকসান সামাল দিতে হবে।’
অনলাইনে আহর্সি নামের একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করেন জারিন সালসাবিল। চলমান পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ৷ জারিন বলেন, ‘অর্ডার বন্ধের আগে মাসে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার বিক্রিও হয়েছে। কিন্তু যখন ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল, তখন ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এখনো সেই অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারিনি।’