ক্যানসার-সৃষ্টিকারী উপাদানের উচ্চ-মাত্রার উপস্থিতি মেলায় ভারতীয় কোম্পানি এমডিএইচ ও এভারেস্ট স্পাইসেসের গুঁড়া মসলা বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে হংকং এবং সিঙ্গাপুর। এই ঘটনার পর ভারতের মশলা রপ্তানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠান দু’টিকে তাদের মশলার গুণগত মান যাচাইয়ের বিস্তারিত তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে হংকংয়ে ভারতীয় ওই দুই কোম্পানির গুঁড়া মশলায় ক্যানসার-সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়ার তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি মাসে হংকং মাছ রান্নায় ব্যবহৃত ভারতীয় কোম্পানি এমডিএইচের তিন ধরনের গুঁড়া মশলা ও এভারেস্টের একটি গুঁড়া মশলার বিক্রি স্থগিত করেছে।
মঙ্গলবার ভারতের মশলার গুণগত মান পরীক্ষা ও তদারকি সংক্রান্ত সংস্থা স্পাইস বোর্ড অব ইন্ডিয়ার জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেছেন, হংকং এবং সিঙ্গাপুরে রপ্তানি করা পণ্যের মান কীভাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং সব ধরনের বিধি-বিধান মেনে রপ্তারি করা হয়েছে কি না, তা জানাতে কোম্পানি দু’টিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এমডিএইসের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজিন্দর কুমার এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আর স্পাইস বোর্ড অব ইন্ডিয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে করা প্রশ্নের কোনও জবাব দেয়নি এভারেস্ট স্পাইসেস।
ভারতের মশলার বাজারের অন্যতম বৃহৎ দুই কোম্পানি এমডিএইচ ও এভারেস্ট স্পাইসেস। দেশটির বাজার গবেষণা সংস্থা জিওন মার্কেট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে এই দুই কোম্পানি ১০ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মশলা বিক্রি করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ২০২২-২৩ সালে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মশলা রপ্তানি করেছে বলে জানিয়েছে ভারতের মশলা বোর্ড।
ভারতীয় মশলার অন্যতম জনপ্রিয় কোম্পানি এভারেস্টের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন ও শাহরুখ খান। ১৯৩০-এর দশকে যাত্রা শুরু করা এমডিএইচ জনপ্রিয়তা পায় তাদের বিজ্ঞাপন ও প্যাকেজিংয়ের কারণে। প্যাকেটের গায়ে কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ধরমপাল গুলাতির মোটা গোঁফ আর মাথায় পাগড়ির ছবি জুড়ে দেওয়া হয়। ভারতে ‘স্পাইস কিং’ বা ‘মশলা রাজা’ হিসেবে পরিচিত ধরমপাল গুলাতি ২০২০ সালে মারা যান।
মঙ্গলবার সকালের দিকে এক বিবৃতিতে এভারেস্ট স্পাইসেস বলেছে, বাজারজাত করা তাদের সব মশলাই ব্যবহারের জন্য নিরাপদ এবং এসব পণ্য ভারতীয় মশলা বোর্ডের পরীক্ষাগার থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র ও অনুমোদন পাওয়ার পরই রপ্তানি করা হয়েছিল।
বিবৃতিতে এভারেস্ট স্পাইসেসের পরিচালক রাজীব শাহ বলেছেন, সিঙ্গাপুর এভারেস্টের ৬০টি পণ্যের মধ্যে মাত্র একটি পণ্য পরীক্ষার জন্য বিক্রি স্থগিত করেছে। হংকং ও সিঙ্গাপুরের কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভারতীয় ওই দুই কোম্পানির গুঁড়া মশলায় উচ্চ মাত্রার ইথিলিন অক্সাইড রয়েছে। যা মানুষের খাওয়ার জন্য অনুপযোগী। আর দীর্ঘসময় ধরে ইথিলিন অক্সাইডের ব্যবহারে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।