পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী লঞ্চের যাত্রী কমলেও ঈদ সামনে রেখে তা বাড়তে শুরু করেছে। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেও লঞ্চে ছিল যাত্রীর তীব্র সংকট। লঞ্চের যাত্রীদের অধিকাংশই বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের। বাকিরা চাঁদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ ও নোয়াখালীর হাতিয়ার। সড়কপথে যানজটের ভোগান্তি পোহানোর শঙ্কার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকেই লঞ্চে বাড়ি যাচ্ছেন। দিন দিন যাত্রী বাড়বে বলে আশা করছেন লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা।
সরেজমিনে ঢাকা নদীবন্দরের সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদ সামনে রেখে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে লঞ্চঘাটে। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেও সেখানে খুব একটা ভিড় ছিল না। ঈদের সরকারি ছুটি ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হলেও ঘরমুখী জনস্রোত শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪ থেকে ১০ এপ্রিল (ঈদের আগের দিন) পর্যন্ত সাত দিনে সাড়ে ২২ লাখ মানুষ নৌপথে ঢাকা ছাড়বে। এই হিসাবে প্রতিদিন ৩ লাখের বেশি যাত্রী সদরঘাট টার্মিনাল হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাবেন। কাগজে-কলমে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের নৌপথ ৪১টি। তবে তীব্র নাব্যসংকট এবং যাত্রী স্বল্পতার কারণে বড় আয়তনের ও বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল না করায় অন্তত ১০টি নৌপথ ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। বাকি ৩১টি নৌপথে ঈদ উপলক্ষে আসা-যাওয়া মিলিয়ে ছোটবড় ১৭৫টি লঞ্চ চলাচল করবে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা রিয়াজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়িতে যাব। কিন্তু সে সময় অনেক ভিড় থাকে। তাই পরিবারের সদস্যদের লঞ্চে বাড়িতে পাঠালাম। আগের থেকে কেবিনের ভাড়া কিছুটা বেড়েছে। ১ হাজার ৫০০ টাকার কেবিন এখন ২ হাজার টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে।’
রেহানা বেগম নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘বাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়। সেইসঙ্গে আবার ঈদের সময় গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া। লঞ্চে যাতায়াতে এ রকম সমস্যা নেই। তাই ঝামেলা এড়াতে এলাম সদরঘাটে।’
বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের টার্মিনালে এখনো সেভাবে চাপ বাড়েনি। তবে সামনে চাপ বাড়তে পারে।’ তবে অগ্রিম টিকিটের জন্য ভিড় আগের মতো নেই বলে জানান তিনি।
এদিকে নৌ দুর্ঘটনা রোধে ঈদ উপলক্ষে সাত দিন বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম (এসসিআরএফ)। সংগঠনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে ৭ থেকে ১৪ এপ্রিল সাত দিন বালুবাহী নৌযান (বাল্কহেড) চলাচল নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। তাছাড়া সব ধরনের অবৈধ নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযান করা দরকার।’ সেইসঙ্গে সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
এসসিআরএফের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সনদবিহীন চালককে (মাস্টার ও ড্রাইভার) শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি অবৈধ চালক নিয়োগ দেওয়ায় নৌযান মালিককেও আইনের আওতায় আনা দরকার। বাল্কহেডের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত নৌ দুর্ঘটনা ও যাত্রীবাহী নৌযান ডুবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনের নাকের ডগায় রাতে শতশত বাল্কহেড চলাচল করছে। তবে নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা ১৫ হাজার হলেও সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের অন্তত ৮৫ হাজার নৌযান রয়েছে। এই ৭০ হাজার অবৈধ নৌযানের মধ্যে অন্তত ছয় হাজার রয়েছে বাল্কহেড। নিবন্ধিত ১৫ হাজার নৌযানের মধ্যে নিয়মিত বার্ষিক সার্ভে (ফিটনেস পরীক্ষা) করা হয় মাত্র আট হাজারের। নিয়ন্ত্রক সংস্থা নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে অবশিষ্ট সাত হাজার ত্রুটিপূর্ণ নৌযান অবাধে চলাচল করছে। কর্র্তৃপক্ষ সেগুলোর বিরুদ্ধে অদৃশ্য কারণে ব্যবস্থা না নেওয়ায় অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই নৌপথে ঘরমুখী হাজার হাজার মানুষের নিরাপদ যাতায়াতের স্বার্থে সাত দিন বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্র্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হলো।’