জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন এবং দল থেকে বহিষ্কৃত প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদকে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন।
রওশন এরশাদের এই ঘোষণার পর জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জরুরী সংবাদ সম্মেলন ডেকে জানিয়েছেন, গঠনতন্ত্রে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে এমন কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তাই রওশনের ঘোষণার কোনো ভিত্তি নেই।
সংসদের বিরোধী দলের নেতা জি এম কাদেরসংসদের বিরোধী দলের নেতা জি এম কাদের
জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে জি এম কাদেরের যাত্রাকাল থেকেই রওশন এরশাদের সঙ্গে মতের মিল ছিল না। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ থাকাকালীন সময় থেকেই এই দুই নেতা আলাদা বলয় গড়ে তোলেন এবং নানাভাবে বিরোধে জড়ান।
রাজধানীর গুলশানের একটি মিলনায়তনে তৃণমূলের সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ স্ত্রী রওশন এরশাদ নয়, ছোট ভাই জি এম কাদেরকে ভবিষ্যৎ নেতা ঘোষণা করেন। বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার ৩৫ জন সংসদ সদস্য এই অনুষ্ঠান বর্জন করেছিলেন।
জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ও সংসদ উপ-নেতার পদ থেকে সরিয়ে স্ত্রী রওশন এরশাদকে মনোনয়ন দেন জেনারেল এরশাদ। যদিও ১২ দিন পর ২ এপ্রিল কো-চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদেরকে পুনর্বহাল করেন এরশাদ।
রাত ১১টায় নিজ বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে এরশাদ ঘোষণা দেন, তিনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত জিএম কাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। অসুস্থ এরশাদ হুইল চেয়ারে বসে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন।
১৪ জুলাই এরশাদ মারা যান। তার মৃত্যুর ৪ দিন পর ১৮ জুলাই বনানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের নাম ঘোষণা করেন। ৬ সেপ্টেম্বর রওশন এরশাদের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন। ১ ঘণ্টা পর পালটা সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদের বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দেন।
জি এম কাদের নিজেকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা করার জন্য স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দেন। এর একদিন পর ৪ আগস্ট বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদের নামে স্পিকারের কাছে আরেকটি চিঠি পাঠানো হয় যাতে বলা হয়, জি এম কাদেরের ওই চিঠি যেনো গ্রহণ না করা হয়।
মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং বিরোধী দলীয় নেতা হবেন রওশন এরশাদ।
থাইল্যান্ড চিকিৎসাধীন অবস্থায় রওশন এরশাদ ২৬ নভেম্বর দলের সম্মেলন আহ্বান করেন। পালটা পদক্ষেপ হিসেবে পরদিন ১ সেপ্টেম্বর মহাসচিব মুজিবুল হক রওশনকে বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দেন।
ভারত সফরে থাকা জিএম কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। যদিও পরদিন চিঠি পাঠানোর কথা অস্বীকার করেন রওশন এরশাদ।
জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশ হয়ে নির্বাচন করবে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর চিঠি দেন রওশন এরশাদ। একই দিন সিইসিকে পাল্টা চিঠি দিয়ে মহাসচিব মুজিবুল হক জানান, নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক সহযোগিতা না করার কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেন রওশন এরশাদ।
জি এম কাদের ও মুজিবুল হককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেন রওশন এরশাদ। মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ।