ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন নীতীশ কুমার। কিছুক্ষণ পরেই বিজেপির হয়ে ফের একই পদে ফিরতে শপথ নেওয়ার কথা তার। রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে নীতীশ বলেন, ‘পুরনো জোট ছেড়ে নতুন জোট করেছিলাম। কিন্তু এখানেও সব ভালো ছিল না। কোনও কাজের কাজ হচ্ছিল না। তাই এই সিদ্ধান্ত।’
কিন্তু নীতীশ ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে বিজেপির এনডিএ জোটে যোগ দেবেন, এমন গুঞ্জন চলছিল কয়েকদিন ধরেই। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তাকে তার কাঙ্ক্ষিত জায়গা দেয়নি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়া।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও জনতা দল (ইউনাইটেড) এর নেতা নীতীশ কুমার ২০২২ সালে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে লালু প্রসাদ যাদবের দল রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে জোট বেঁধে নতুন সরকার গঠন করেছিলেন। পরে তিনি বিজেপিবিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য়ও যোগ দিয়েছিলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নীতীশ কুমার কেবল ইন্ডিয়া জোটই ছাড়বেন না, এমনকি তিনি ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গেও জোট বাঁধতে যাচ্ছেন আগামী লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে। এমনটা হলে তা হবে কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটের জন্য অনেক বড় ধাক্কা।
নীতীশ নিজেই ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম বড় মুখ ছিলেন। এমনকি তিনি তার রাজ্যের রাজধানী পাটনায় জোটের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকও আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু তার পরও নীতীশ কেন ইন্ডিয়া ছাড়ছেন এবং বিজেপিতে ভিড়ছেন, তা এক বড় প্রশ্ন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নীতীশ কুমারের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, মূলত জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকই নীতীশের জোট ছাড়ার অন্যতম কারণ। বিষয়টি কোনো না কোনভাবে নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এর সূত্র ধরে মোদির দল বিজেপি নীতীশকে লুফে নিতে উঠে পড়ে লেগেছে।
ওই ব্যক্তি আরও বলেছেন, ১৩ জানুয়ারির বৈঠকে ইন্ডিয়া জোটের আহ্বায়ক হিসেবে নীতীশ কুমারের নাম প্রস্তাব করেছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কস) প্রধান সীতারাম ইয়েচুরি। লালু প্রাসাদ যাদব, শারদ পাওয়ারসহ বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ নেতাই এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। কিন্তু আপত্তি জানান কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি ও পোস্টারবয় রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, যেহেতু বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত নেই এবং তার যেহেতু নীতীশের ব্যাপারে আপত্তি আছে, তাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করা উচিত।
কিন্তু নীতীশ কুমার সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব বলেন, যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে নেই এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা নিতীশের পক্ষে তাই সিদ্ধান্তটি মমতার অনুমোদনের জন্য আটকে থাকা উচিত নয়। এ সময় বৈঠকে উপস্থিত কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বা সোনিয়া গান্ধী কেউই রাহুলকে বিষয়টি বাদ দিতে বলেননি।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, নীতীশ কুমার মনে করেন, রাহুল গান্ধী বিষয়টি নিয়ে মমতাকে প্রভাবিত না করে এবং তাকে জোটের সঙ্গে না এনে বৈঠকে তাকে অপমান করেছেন।
যদিও, নীতীশের বেলায় পক্ষ বদলের ঘটনা নতুন নয়। গত ১০ বছরে এনিয়ে পঞ্চমবার শিবির বদল করলেন নীতীশ কুমার। তাই তার চলে যাওয়ায় অবাক হননি এবং নীতীশ যে জোটে থাকবেন না এমনটা আগেই ধারণা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন কংগ্রেসের সভাপতি ও ইন্ডিয়া জোটের মুখ্যনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে।