ভারতের অস্বস্তি বাড়িয়ে চীনের জন্য নিজের দেশের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিতে চাইছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। সব কিছু সময় ধরে এগোলে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটিতে যাচ্ছে চীনের নজরদার জাহাজ।
একাধিক দেশের গোপন গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের কাজ করা সংস্থা ‘ড্যামিয়েন সাইমন’ তাদের এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছে, চীনের জাহাজ জিয়াং ইয়াং হং ৩ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঢুকছে। জাহাজটির গন্তব্য মালদ্বীপের রাজধানী মালে বলে জানিয়েছে ওই সংস্থা। ওই সংস্থা জানিয়েছে, জাহাজটি মালদ্বীপের কোনও বন্দরকে পোতাশ্রয় হিসাবে ব্যবহার করে ভারত মহাসাগরে সমীক্ষা চালাবে। তবে কিসের উপর এই সমীক্ষা চলবে, তা স্পষ্ট নয়।
চীনের জাহাজের মালদ্বীপের উদ্দেশে রওনা দেয়া ভাল ভাবে নিচ্ছে না ভারত। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ভারতীয় সেনার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, নয়াদিল্লি গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। চীন অবশ্য জানিয়েছে, তাদের এই জাহাজটি সামরিক জাহাজ নয়। কিন্তু ভারতের আশঙ্কা যে, সমীক্ষার নাম করে আসলে প্রতিবেশী দেশগুলির গোপন তথ্য সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেবে ওই নজরদার জাহাজ।
শুধু ভারত নয়, চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকার অভিযোগও প্রায় একই। ওয়াশিংটনের বক্তব্য, গোপন তথ্য চুরি করতেই সমীক্ষার নাম করে জলপথে অভিযান চালাচ্ছে চীন। তা ছাড়া আমেরিকার আশঙ্কা, দক্ষিণ চীন সাগর, প্রশান্ত মহাসাগরের পর এ বার ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘আগ্রাসী’ হওয়ার চেষ্টা করছে বেইজিং। অভিযোগের প্রেক্ষিতে, পাল্টা ভারত, আমেরিকাকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীনের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম। শুধু ভারত কিংবা চীনই নয়, কিছু দিন আগে ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়াও দাবি করেছিল যে, তাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) ঢুকে পড়েছে চীনের নজরদারী জাহাজ।
গত বছর চীনের নজরদার জাহাজ ‘ইউয়ান ওয়াং ৫’ শ্রীলঙ্কার বন্দরে ভিড়েছিল। সেই সময়ও এই বিষয়ে ভারতের তরফে কড়া বার্তা দেওয়া হয়। যদিও তার পরও চলতি বছরেরই অগস্ট মাসে শ্রীলঙ্কায় নোঙর ফেলেছিল পিএলএ-র জাহাজ ‘হাই ইয়াং ২৪ হাও’। চীন এগুলিকে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত জাহাজ বলে দাবি করলেও ভারতের আশঙ্কা ছিল যে, পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উপর নজরদারি করতেই বার বার শ্রীলঙ্কার নৌসেনার পোতাশ্রয়ে যাচ্ছে চীনা যুদ্ধজাহাজগুলি।
তবে ভারত-মালদ্বীপ চলতি বিতর্কের আবহে চীন-ঘনিষ্ঠ মুইজ্জুর সিদ্ধান্তে অন্য সমীকরণ দেখছে ভারত। কিছু দিন আগেই ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সংক্রান্ত একটি চুক্তি পুনর্নবীকরণে রাজি হয়নি মালদ্বীপ সরকার। ২০১৯ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন মালদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন, তখন দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারত মালদ্বীপের উপকূল, সমুদ্রের পানি, জোয়ার-ভাটা নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা চালাতে পারত।
ভারতের উদ্বেগ এবং আপত্তিকে শ্রীলঙ্কা গুরুত্ব দিলেও, চীনের জাহাজকে বিকল্প পোতাশ্রয়ের সন্ধান দিতে নিজেদের দেশের দরজাই খুলে দিয়েছে মালদ্বীপ। প্রসঙ্গত, মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ‘চীনঘেঁষা’ বলে পরিচিত মুইজ্জু নির্বাচনী প্রচারেই জানিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে ‘ভারতকে অগ্রাধিকার’ দেয়ার নীতি থেকে সরিয়ে আনবেন দেশকে। কিছু দিন আগেই ১৫ মার্চের মধ্যে ভারতীয় সেনাকে মালদ্বীপ ছাড়ার ‘নির্দেশ’ দিয়েছে মুইজ্জুর সরকার। মুইজ্জুর সেনা সরানো সংক্রান্ত নির্দেশের নেপথ্যে চীনের হাত দেখছেন কেউ কেউ।
সম্প্রতি পাঁচ দিনের জন্য চীন সফরে গিয়েছিলেন। সফরের তৃতীয় দিনে গত বুধবার জিনপিংয়ের সঙ্গে রাজধানী বেইজিংয়ে বৈঠক করেন মুইজ্জু। দেশ থেকে ফিরেই কোনও দেশের নাম না করে হুঁশিয়ারির সুরে তিনি জানিয়েছিলেন, কাউকে ধমকানোর ছাড়পত্র দেয়নি তার সরকার। বর্তমানে মালদ্বীপে মাত্র ৮৮ জন ভারতীয় সেনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মূলত মালদ্বীপের বেশ কিছু শিল্পক্ষেত্র, আবাসনকে পাহারা দেয়া এবং দূরবর্তী দ্বীপগুলিতে ওষুধ এবং ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়ে দেয়ার কাজে নিযুক্ত এই সেনাকর্মীরা।