দেশব্যাপী আগামী ২৭ জানুয়ারি বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তি ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকার একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করে দেশে কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা আরো পাকাপোক্ত করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারের আচরণ, পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার ও নির্বাচনী পরিস্থিতিতে দেখা যায়, দেশের গণতন্ত্রহীনতায় নির্বাচন ব্যবস্থা এখন ভঙ্গুর ও সুষ্ঠু নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে।
বর্তমান ও অতীতের ক্ষমতাসীনদের শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি, রাজনীতিকে ব্যবসায় পরিণত করা, মুক্তবাজারের লুটপাটের অর্থনীতির ধারায় চলমান বাজারি রাজনীতি এই সংকটকে আরো গভীর করে তুলেছে। এরা রাজনীতিকেও রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে প্রিন্স বলেন, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির এই বৃত্ত ভাঙা না হলে, অপরাজনীতি দূর করার পথ পরিষ্কার হবে না। এ অবস্থার পরিবর্তন ছাড়া জনগণের ন্যূনতম ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা যাবে না।
শোষণমূলক ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে এবং শাসকগোষ্ঠীর কোনো অংশের প্রতি নির্ভর করে অবস্থার পরিবর্তন করা যাবে না। তাই ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটিয়ে শোষণমূলক পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন করেই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই লক্ষ্যে সব নীতিনিষ্ঠ বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, সরকারের ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করেছে গত জাতীয় নির্বাচনে হারা জেতা।
এর জন্য ছাপ্পা ভোট, প্রশাসনিক কারসাজিসহ নানামুখী কারসাজি করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সরকারি দলের প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের নিজস্ব ভোটকেন্দ্রে কিছু মানুষ ভোট দিতে গেছে। এ ছাড়া অন্যান্য সেন্টারে দুই/তিন, পাঁচ, দশজন মানুষ ভোট দিতে গেছে। ভোটকেন্দ্রে মানুষ ছিল না। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দল নয়, সরকারি দল তাদের সমর্থক বা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিশ্চিহ্ন করার কাজটি সম্পন্ন করেছে।
যা একদলীয় শাসনের দিকে যাত্রারই ইঙ্গিত বহন করে।
সংবাদ সম্মেলনে চলমান রাজনৈতিক সংকট দূর করতে একদলীয়, অগ্রহণযোগ্য, জনসমর্থনহীন প্রহসনের নির্বাচনে ঘোষিত সংসদ ভেঙে দিয়ে, অবিলম্বে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদ) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ, ২৮ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ, মতবিনিময় সভা এবং এ সময় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিকদের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণসহ জনজীবনের সংকট দূর, সম্পদ লুটপাটকারীদের শাস্তির দাবিতে দুদক, এনবিআর-এর সামনে অবস্থান, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণের কথা জানানো হয়।