তেহরান-ইসলামাবাদ উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান সীমান্তে বড় ধরনের সামরিক মহড়া আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে ইরান। একে অপরের অভ্যন্তরে ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ হামলার প্রেক্ষাপটে এই ঘোষণা দিলো ইরান।
ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) খাতাম আল-আম্বিয়া বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটির কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাদের রাহিমজাদেহ এই ঘোষণা দিয়েছেন।
জেনারেল কাদের বলেন, মহড়ার সাধারণ ক্ষেত্র হবে ইরানের অভ্যন্তরে আবাদান থেকে চাবাহার পর্যন্ত বিস্তৃত ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মাইল) এলাকা। তবে মহড়ার মোট এলাকা হবে ৬০০ বর্গকিলোমিটার (২৩০ বর্গমাইল)।
তিনি বলেন, এই মহড়ায় মনুষ্যবাহী এবং মনুষ্যবিহীন অনেক বিমান অংশ নেবে। এসময় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হবে। আকাশ থেকে আসা লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়েও আক্রমণ করা হবে।
উল্লেখ্য,পাকিস্তান আজ বৃহস্পতিবার ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের ভেতরে একটি ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ইরানের হামলার এক দিন পর পাকিস্তান এবার হামলা চালাল। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে। ইরান জানিয়েছে, এই হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে।
পাকিস্তান মূলত বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) সদস্যদের ওপর হামলাটি চালিয়েছে। পাকিস্তান একে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। এই সংগঠনটি পাকিস্তানে কর্মরত চীনাদের ওপর বেশ কয়েকবার ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল। এমনকি তারা পাকিস্তানে অবস্থানরত চীনাদের পাকিস্তান ত্যাগ করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এই হামলায় বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। এই হামলার কোড নাম ছিল ‘মার্গ বার সমাচার।’
ইরানের ওই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছিল পাকিস্তান। এমনকি ইরানে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের কথাও ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান।
তবে ইরান জানিয়েছিল, তারা কেবল সন্ত্রাসী আস্তানাতেই হামলা চালিয়েছিল। এতে পাকিস্তানের কেউ হতাহত হয়নি।
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের গ্রিন মাউন্টেইন এলাকায় ইরান জৈশ আল-আদল নামের গ্রুপটির আস্তানায় হামলার দাবি করেছিল। ওই হামলায় দুই শিশু নিহত হয়েছে বলে পাকিস্তান দাবি করে।
ইরানি হামলাটি ছিল সিরিয়া ও ইরাকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আক্রমণের অংশবিশেষ। এতে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সঙ্ঘাত বাড়তে পারে বলে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছিল।
আর বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর জানায়, গত কয়েক বছর ধরে ইরানে থাকা সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানার ব্যাপারে তেহরানকে জানানো হচ্ছিল। পাকিস্তান জানিয়েছে, ওইসব সন্ত্রাসীর ইরানে নিরাপদে থাকার প্রমাণও তাদের কাছে রয়েছে।
কিন্তু ‘সারমাচার’ নামে পরিচিত ওই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ইরান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে তারা নিরীহ পাকিস্তানিদের হত্যা করার সুযোগ পেয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর জানায়, পাকিস্তানের জনগণ ইরানিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা অনুভব করে। আর যৌথ উদ্যোগে সন্ত্রাসবাদের আপদ বিদায় করার জন্য সংলাপের ওপর জোর দেয়।
সূত্র : দি নিউজ, আল জাজিরা, ডন এবং অন্যান্য