কদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ‘দেয়াল আলমারি’ নাটকের বিভিন্ন অংশ চর্চিত হচ্ছে। ‘এমন নির্দয় স্বামী পাওয়া সত্যিই দুর্ভাগ্যের’এমন শিরোনামের ভিডিওটি শেয়ার করছেন অনেকে। যেখানে দেখা যায়, অভিনেতা মোশাররফ করিম ও রুনা খানকে। নাটকটিতে দরিদ্র স্বামী স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তাঁরা।
যেখানে কথায় কথায় স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন মোশাররফ। সেই স্ত্রীর চরিত্রেই অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী রুনা খান।
ভিডিওটি নিজের পেজে শেয়ার করে সেই সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করলেন রুনা খান। তিনি লিখেছেন, ‘২০০৭ সালে ‘‘দেয়াল আলমারি’ নাটকের শুট করেছিলাম গাজীপুরে, যদি ভুল না করে থাকি।
আম্মা তখন শুটিংয়ে যেতো আমার সাথে। দুইদিনের শুটিং নিজের চোখে দেখেছে, ওখানে কিছু বলেনি। বাসায় ফিরে বলেছিলো, জীবনে কোনদিন আর এমন চরিত্র করতে দেবে না! পৃথিবীর সবচেয়ে নামী পরিচালক, দামী অভিনেতা সাথে থাকলেও না!’
সেই শুটিংয়ের স্মৃতি রোমন্থন করে রুনা লিখেছেন, ‘টানা ৭ দিন জ্বর ছিলো আমার বাসায় ফেরার পর। মাথা, গাল, পিঠ সব ফোলা, ব্যাথা।
চড়ের চোটে মুখের ভেতরে জিভ, গালের ভেতরের চামড়া কাঁটা। অন্তত ১৫ দিন ঝাল কিছু খেতে পারিনি! মোশাররফ করিম জীবনের প্রথম মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পান এই নাটকের জন্য। আর আমি সেই অনুষ্ঠানে দাওয়াত পর্যন্ত পাইনি সেবার!’
নাটকটি করার পর মোশাররফ করিম রুনার কাছে মাফ চেয়েছেন বলেও জানান এই অভিনেত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘তারপর মোশাররফ করিমের সাথে যত কাজ করেছি, প্রতি শুটিংয়ে অন্তত ১ বার করে মাফ চেয়েছে, তোরে এত মারছি দেয়াল আলমারিতে! পারলে মাফ করে দিস! কোন উপায় ছিলো না আমার! ’
যোগ করে রুনা লিখেছেন, ‘অরণ্য আনোয়ারের সাথে যারা করেছেন তারা জানেন, তিনি পারিশ্রমিক কিভাবে দেন। বাজারে আপনি ১০ টাকা পেলে, সে দেবে ৮ টাকা! তবে আগেই বলে নেবে এবং শুট শেষে অবশ্যই টাকা হাতে, বাসায়, ব্যাংকে পৌঁছে দেবার জন্য পাগল হয়ে যাবে! বলে ২ টাকা কম দেবে, কিন্তু চালাকি করে ১ পয়সাও মেরে দেবে না! পুরো নাটকে প্রতিটা মারের দৃশ্য দর্শক ১ বার দেখেছে।
কিন্তু পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী তিনজনেই দাঁতে-দাঁত চেপে, মনে-মন চেপে অন্তত ৩-৫ বার শট নিয়েছে-দিয়েছে। শুধু যদি একটা ভালো কাজ হয় এই আশায়। এই নাটক আমাকে খুব স্বীকৃতি, খুব জনপ্রিয়তা কিছুই দেয়নি! তবে অরণ্য আনোয়ারের ‘দেয়াল আলমারি’ এখন পর্যন্ত মোশারফ করিমের সাথে আমার সবচেয়ে প্রিয় নাটক।’’
অভিনেত্রী আরও লিখেছেন, ‘‘২০ বছরে পর্দায় যেকোন চরিত্র করার ব্যাপারে আমার মার কোন নিষেধ নেই, শুধু একবারই বলেছিলো যেন ‘সখিনা’র মত চরিত্র আর জীবনে কোনদিন না করি! আমি আম্মাকে বলেছিলাম, ‘আম্মা আমি তো ২ দিন ক্যামেরার সামনে সখিনার জীবন কিছুটা যাপন করেছি মাত্র। আমাদের দেশে বহু সখিনা সারাটা জীবন ক্যামেরার বাইরে ঘরে-পরিবার-সমাজ-দেশের সবার চোখের সামনে এই জীবনযাপন করে। আমি দুদিন মার খেয়ে যদি ওদের ২-৩ যুগের মার খাওয়াটাও দর্শককে-সমাজকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে পারি। আমি সেটাই করতে চাই।’’